মানুষ আল্লাহর তায়ালার শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি। বিবেক ও বিবেচনাবোধ মানব জীবনের অপরিহার্য বিষয়। শৈশব, কৈশর, যৌবন ও বার্ধক্যের পরিণতি ও পরিধি নিয়ে আমাদের জীবনের খেলাঘর। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আমরা অসংখ্য মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলি, কথা বলি। ভাবের আদান প্রদান, চিন্তার বিনিময়, লেনদেন, চলা-ফেরা, উঠা-বসা করে থাকি। যাকে ভাল লাগে তার কাছে বারবার ছুটে যাই, বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করি, আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হই।
আপন মনে করে সুখ-দুখ, আনন্দ-বেদনা, ভাল- মন্দের কথাবলি।যেহেতু মানুষ সামাজিক জীব, তাই মানুষ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। স্বভাবতই জীবন চলার পথে বন্ধু গ্রহণ করতে হয়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য নিখাঁদ ভালবাসা থেকে গড়ে উঠা বন্ধুত্ব হয় স্থায়ী ও টেকসই । সামান্য স্বার্থের জন্য বৈষয়িক ফায়দা লাভের আশায় যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা হয় অত্যন্ত ঠুনকো, স্বার্থে আঘাত লাগলেই তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যায়, মরীচিকার মতো উবে যায়, স্বার্থের টানাটানিতে শুরু হয় শত্রুতা।
স্বার্থের এ দুনিয়ায় বন্ধুত্ব তো দূরকি বাত; স্বার্থের দ্বন্দ্বে নাড়ীর ধন, রক্তের বাঁধন, আত্মীয়তার পবিত্র বন্ধনগুলোতেও পড়ে ভাটার টান। স্বার্থের দোলাচলে দোলতে থাকে বিশ্বাস-অবিশ্বাস, দুস্ত- দুশমনির জগন্য খেলা। ব্যক্তিগত কিছু স্বার্থ রক্ষার জন্য, মত-পথ, পছন্দ-অপছন্দ বা ব্যক্তিত্বের দ্বন্ধ থেকে শুরুহয় প্রচ্ছন্ন এক লড়াই, অসুস্থ এক প্রতিযোগিতা। সাপ নেউলের এ লড়াইয়ে কেউ হয় জালিম আর কেউ হয় মাজলুম। বন্ধুত্ব স্বার্থপরতায় রূপ নেয় তখন অন্যায়ভাবে একজন আরেক জনকে কাঁদায়, দেনা পাওনায় ঠকায়, কারণে অকারণে কষ্ট দেয়, অপমান করে সাময়িক পরিতৃপ্তি খুঁজে। কেবল হিংসার বশবর্তী হয়ে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ক্ষতি সাধন করে,প্রভাব বিস্তার করে, জীবন জীবিকা অস্থির করে তুলে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মান- সম্মানে আঘাত হানে,সমালোচনা করে প্রাপ্য অর্জনকে খর্ব করে, দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে, ক্ষমতার অপব্যবহার, চতুরতা ও অপ-কৌশলের মাধ্যমে অপরকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এক জঘন্য খেলায় মেতে উঠে।
সমাজে কিছু ক্ষমতাবান লোক আছে যাদের কাছে কারো কথা-বার্তা,কাজ- কর্ম, চলন-বলন,আচার- আচরণ মনমতো না হলে বা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলে তাদের ইগোতে লাগে, প্রেস্টিজ পাংচার হয়েছে মনে করে প্রতিশোধ নিতে হামলে পড়ে। আমাদের সমাজে এ চরিত্রের মানুষ খুব বেশি না হলেও তাদের সহযোগি,সমর্থক বা তাদের দ্বারা সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা কম না। জালিমের জুলুম সবাই অপছন্দ করলেও তার ক্ষমতা দ্বারা ফায়দা লাভের সুযোগ সন্ধানী মানুষের অভাব নেই।
সমাজের প্রতিটি পরতে পরতে তাদের সন্ধান মিলে। বনের কিছু হিংস্র প্রাণীকে আপনি বিরক্ত না করলেও সে তার ক্ষুধা নিবারণের জন্য আপনার ওপর হামলে পড়বে। এটাই স্বাভাবিক প্রকৃতি। আমাদের সমাজেও জগন্য মানসিকতার এক শ্রেণীর স্বার্থপর লোক আছে, যাদের স্বার্থপরতার কাছে আত্মীয় -অনাত্মীয়, ভাই -বন্ধু সব কিছুই বেকার। তাদেরকে কোনরকম বিরক্ত বা ক্ষতি না করলেও সে তার সামান্য স্বার্থ লাভের আশায় আপনার ক্ষতি করবে জীবন জীবিকা বিষিয়ে তুলবে।
সব সমাজেই বল প্রয়োগকারী,ক্ষমতা প্রদর্শনকারী কিছু মানুষ থাকে যারা মানুষকে ঠকায় কষ্ট দেয় ক্ষতি করে। এক কথায় বলতে গেলে বলা যায় শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিকভাবে মানুষের ওপর জুলুম করে। মজলুম মানুষটি হন্য হয়ে বিচার পাওয়ার আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নায্য বিচার পেতে ব্যর্থ হয়। জালিমের ক্ষমতা আর দাপটের কাছে যখন হেরে হয়ে দিশেহারা । তখন সকল অত্যাচারের কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে মনের গভীর থেকে দীর্ঘ:শ্বাস ছেড়ে আকাশ পানে তাকিয়ে পৃথিবীর মালিকের কাছে নির্বাক অভিযোগ দায়ের করে। এই অভিযোগের ভাষা এতটাই তীব্র ও জুড়ালো হয় যে, মহান রব নিজের ও মজলুমের মাঝে কোন পর্দা রাখেন না। ফলে ক্ষেত্রবিশেষ কিছুটা সময় নিয়ে অথবা কাল বিলম্ব না করে জালিমের উপর নেমে আসে অত্যাচারের শাস্তি। যা আমাদের সমাজে’ প্রকৃতির প্রতিশোধ ‘বা ‘রিভেঞ্জ অব নেচার’ হিসাবে পরিচিত।
আসলে কারো বিচার করার ক্ষমতা প্রকৃতির নেই কারণ প্রকৃতি আল্লাহর সৃষ্টি এবং তিনিই তার একমাত্র নিয়ন্ত্রক। দুনিয়ার ভাল মন্দের হিসাব আল্লাহ পরকালে গ্রহন করবেন। প্রতিটি আমালের প্রতিদান দিবেন। তবে কিছু কিছু অপরাধের শাস্তি আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতেও প্রদান করে থাকেন। তন্মধ্যে বিশেষ একটি অপরাধ হলো জুলুম।
পৃথিবীর সূচনা লগ্ন থেকে অধ্যাবদি যত জালিম বিগত হয়েছে প্রত্যেকের শেষ পরিণতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। মানুষকে ঠকিয়ে, কারো সাথে প্রতারণা করে, কারো ক্ষতি করে, কাউকে বঞ্চিত করে বা কারো সাথে অন্যায় আচরণ করে কেউ পার-পেতে পারে না।
সময়ের ব্যবধানে প্রতারণা, বঞ্চনা, ক্ষতি এবং জুলুমের প্রতিটি অংশ নিজের দিকে ফিরে আসবেই। কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। সুতরাং যে যেমন ক্ষেত্র তৈরি করবে সে তেমনি ফল ভোগ করবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে জালিম ও মজলুম হওয়া থেকে হেফাজত করুন। তাওবার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আমাদের বন্ধুত্ব হোক নিখাঁদ, ভালবাসা ও ভাললাগার বাতায়ন হোক কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
কাজী আরিফুর রহমান
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক
লালপুর তালীমুল কোরআন মাদানী নেসাব মাদ্রাসা
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized