মঙ্গলবার রাত ১২:৫২, ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী

১৬ বছরের অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের জিগির: বাস্তব পরিস্থিতি ও অতীত ইতিহাস

১৫০ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

মূল ঘটনা:

‘হিন্দুতভা নাইট’ নামের একটি এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেল থেকে ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মতুর্জার  বাড়ি পোড়ার দৃশ্যের একটি ছবির পাশে লিটন দাসের একটি ছবি কোলাজ করে একটি পোস্ট করা হয়। এ পোস্টে লেখা হয় সনাতন ধর্মাবলম্বী এ ক্রিকেটারের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। পোস্টটি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।

এ পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্ডিয়ান মিডিয়া দ্য ইকোনমিক টাইমস ‘বাংলাদেশি ক্রিকেটার লিটন দাসের বাড়ি আন্দোলনকারীরা পুড়িয়ে দিয়েছে? ভাইরাল ভিডিওর পেছনের সত্যিটা এখানে’ শিরোনামে করা প্রতিবেদনে সত্যি ঘটনাটি জানায়।

তারা লিখেছে, পুড়তে থাকা বাড়ির যে ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সেটা লিটন দাসের নয়-মাশরাফী বিন মতুর্জার বাড়ি।

ক্রিকেটার লিটন দাস নিজেই বিষয়টি সম্পর্কে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে নিজেই এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এ ক্রিকেটার।

দীর্ঘ পোস্টে গুজবে কান না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘প্রিয় দেশবাসী সকলের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একটি বিষয় অবগত করতে চাই। সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন মিডিয়াতে আমাদের বাড়িতে হামলার ঘটনা নিয়ে একটি খবর প্রচার করা হয়েছে। যার কোনো সত্যতা নেই। কেউ এসব গুজবে কান দেবেন না। আমি এবং আমার পরিবার এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপদে রয়েছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এ দেশে আমরা সকল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যেন একসাথে সামনে এগিয়ে যেতে পারি সেটাই এখন আমাদের একমাত্র মূলমন্ত্র হওয়া উচিত।

আমার দিনাজপুরবাসী সহ পুরো দেশ একে অন্যের রক্ষায় যেভাবে নিয়োজিত ছিলেন সেটা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং আমি কৃতজ্ঞ। আমি আশা করবো ভবিষ্যতেও আমরা সবাই একসাথে থাকবো এবং সকল ধরণের সহিংসতা থেকে দূরে রাখবো এ দেশটাকে। কারণ দেশটা আমাদের সবার।’

নতুনরূপে পুরনো আওয়ামী খেলা:

সচেতন মহল নিশ্চয় খেয়াল করেছেন যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যূত হলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের নাটক শুরু করা হয়। ইন্ডিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত এ দলের প্রচার সেলের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা বামপন্থীরা হলো এসব নাটকের অনুঘটক।

গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। এর পরপর দেশে সাম্প্রদায়িক অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিরোধে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও সর্বস্তরের মানুষ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী-ঘর ও মন্দির পাহারা দিচ্ছে। এসব প্রশংসনীয় বিষয়গুলোকে হাইলাইট না করে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের জিকির তোলা হচ্ছে ।

ইন্ডিয়ান মদদপুষ্ট ও আজ্ঞাবহ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগই যে, সংখ্যালঘু নির্যাতনের এসব অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের অনুঘটক সেটা সচেতন মহল ওয়াকিবহাল।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত:

সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ী-ঘর ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিচ্ছে-এ ধরণের ধর্মীয় সম্প্রীতি অনেকের পছন্দ হচ্ছে না। এ ধরণের ঘটনা প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়ায় স্বপ্নেও কল্পনা করা যায়? অথচ বাংলাদেশের কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভুয়া নিউজগুলো সবচেয়ে বেশি প্রচারিত হয় ইন্ডিয়া থেকে।

বাস্তবে দেশের কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।‘ অপ্রীতিকর ঘটনা যে, একেবারে হয়নি সেটা বলা যাবে না। তবে সেগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নয়।

জনরোষ থেকে বাঁচতে আওয়ামী অপকর্ম:

সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি সমাবেশের নিউজ প্রচারিত হয়েছে। সেসব সমাবেশে যোগ দেয়া লোকদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চেয়ে আওয়ামী লীগ ও এ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংখ্যাই বেশি দেখা গেছে।

জনরোষ থেকে বাঁচতেই এ অপকর্ম ও অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে পতিত আওয়ামী লীগ। কারণ ১৬বছর যাবৎ এ দলের নেতা-কর্মীরা রাজনৈতিক বিরোধী ও সাধারণ মানুষের ওপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের অন্যতম কারিগর মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের পান্ডা আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য ও বিনা ভোটের সাবেক সিসিসি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন-এর পান্ডা হিল্লোল সেন উজ্জ্বল চট্টগ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে বিভ্রান্ত করে অন্তর্ঘাত চালানোর অপচেষ্টা পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নওফেল ইন্ডিয়ান উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন-এর অনুচর। তিনি প্রায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘাড় মটকে দেয়ার হুমকি দিতেন।

এদিকে গত ৯ আগস্ট দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘ইন্ডিয়ান নেতারা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে আসবেন। তারা বাংলাদেশে নির্যাতিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলবেন’-এমন গুজব ছড়িয়ে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা সীমান্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জড়ো করার অভিযোগ ওঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।

শুক্রবার ৯ আগস্ট বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়নের উত্তর গোতামারী সীমান্তে গিয়ে তিন শতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দেখা যায়।

হাতিবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চুর শ্বশুরবাড়ি ওই এলাকায়। তিনি ওই সীমান্ত এলাকায় গুজব ছড়িয়ে এসব লোকজন জড়ো করেন। এ সময় তাদের ভিড় সামলাতে বিজিবি ও পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

খবর পেয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ ও পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হিন্দু সম্প্রাদায়ের লোকজনের সাথে কথা বলে তাদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। সূত্র: দৈনিক কালবেলা, ৯ আগস্ট, ২০২৪।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগ ওঠেছে। শুক্রবার রাতে উপজেলার মালখানগর ইউনিয়নের ফুরশাইল গ্রামের পোদ্দার বাড়ি রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ফটকের সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করে এলাকাবাসী। তারা এ ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করলে পরে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।

ওই দু’জন হলো–ফুরশাইল গ্রামের রিফাত ও কাজীরবাগ গ্রামের তুহিন। তাদের সাথে থাকা সমিত বেপারি ঘটনার পর পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে রাধাগোবিন্দ মন্দিরের ফটকের সামনে একটি বোমা ফাটায় তিন যুবক। এ সময় এলাকাবাসী জড়ো হয়ে রিফাত ও তুহিনকে ধরে ফেলে। এরপর তারা স্বীকার করে যে, মালখানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ খানের নির্দেশে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। পরে মা-বাবাকে ডেকে তাদের হাতে দু’জনকে তুলে দেয়া হয়। সূত্র: সমকাল, ১০ আগস্ট, ২০২৪।

চিন্তা করে দেখেছেন কতো জঘন্য আওয়ামী লীগ এবং এ দলটির নেতাদের চরিত্র? ক্ষমতা হারানোর কয়দিন যেতে না যেতে আবারো নানা অপকর্ম শুরু করেছে ইন্ডিয়ান উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দোসর এ রাজনৈতিক দলটি। এ দলটি ক্ষমতায় থাকলে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে জুলুম-নির্যাতনের স্টিম রোলার চালায়। আবার ক্ষমতা হারালেও তারা মানুষকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। তারা সংখ্যালঘুদের ব্যানারে পুনর্বাসিত হবার কোশেশ করছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের উচিত হবে আওয়ামীদের ফাঁদে পা না দেয়া।

আওয়ামী নেতাদের দ্বারা সংঘটিত ও বহুল প্রচারিত কথিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের নাটকগুলো আগে ভাল ভাবে বুঝুন এবং জানুন। ঘটনার আগাগোড়া না জেনেই অনেকেই অতি মানবতাবাদী সেজে ফেসবুকে নানারকম পোস্ট করছেন। এটা সঠিক নয়।

উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আস্ফালন ও ষড়যন্ত্র:

সংখ্যালঘু নির্যাতনের নাটকগুলো ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হচ্ছে। এ জন্য চলতি বছর ফরিদপুর সংঘটিত একটি হত্যাকান্ডের ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হলো। আওয়ামী লীগ ও ইন্ডিয়ান উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের এদেশীয় দোসররা চলতি বছর ২ জন মুসলিম সহোদর যুবককে হাত-পা বেঁধে অন্ধকার যুগের মতো নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল সাড়ে ৭টার দিকে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামে কালি মন্দিরে কথিত কথিত আগুন লাগার ঘটনায় নেহায়েত সন্দেহের বশবতি হয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ২ জন নিরীহ মুসলিম নির্মাণ শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ২ সহোদর হলো  মো. আশরাফুল (২০) ও তাঁর ভাই মো. এরশাদুল (২১)। এদের মধ্যে একজন কুরআন হাফেজ। এ ঘটনার পর রাজশাহী বিভাগীয় হিন্দু মহাজোট নেতা সুমন মোহন্ত চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্য ও বিচক্ষণতার কারণে পরিস্থিতি আর বেশি উত্তপ্ত হয়নি।

পুরনো ইতিহাস:

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বা সহিংসতায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মারা যাবার ইতিহাস নেই। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা প্রভাবিত বাংলাদেশের বামপন্থীরা কথায় কথায় এ দেশের মানুষকে সাম্প্রদায়িক বলে বিদ্বেষ ছড়ায়। অথচ বাস্তবে এ দেশে সাম্প্রদায়িকতার লেশ মাত্র নেই। সহিংসতার ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে মূলত সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়কে দাবার খুঁটির মতো অপব্যবহারকারী আওয়ামী লীগ।

দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস:

বৃটিশ থেকে স্বাধীনতা লাভের অল্প কিছুদিন আগে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ঘটে যায় পূর্ব ইন্ডিয়ার ইতিহাসের কুখ্যাত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ। যার নাম ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরুর প্রথম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণ হারান চার হাজার নিরীহ হিন্দু ও মুসলিম। গৃহহারা হন এক লাখেরও বেশি মানুষ।

নোয়াখালীর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা:

দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস এর জের ধরেই নোয়াখালীতে ঘটে আরেক নির্মম সাম্প্রদায়িক সহিংসতা। উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যে হঠাৎ করেই একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে। গুজবটি ছিল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থানার করপাড়ার জমিদার রাজেন্দ্রলাল চৌধুরীর বাড়িতে ইন্ডিয়া সেবাশ্রম সংঘের এক সন্ন্যাসী এসে ওঠেছেন। তার নাম সাধু ত্রিয়াম্বাকানন্দ। তিনি নাকি ঘোষণা করেছেন, পূজার জন্য ছাগবলির বদলে এবার তিনি মুসলিমের রক্ত দিয়ে দেবীকে প্রসন্ন করবেন। এ গুজবের ওপর ভিত্তি করেই এ অঞ্চলের ইতিহাসের অন্যতম সাম্প্রদায়িক সহিংসা ঘটে। এ সহিংসতায় বিপুল সংখ্যক হিন্দু ও মুসলিম মারা যায়। লেখা বেশ হয়ে যাবার কারণে এ বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা যাচ্ছে না। পরে আলাদা আরো একটি নিবন্ধ লিখবো ইনশাহআল্লাহ।

৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরও সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম সম্প্রদায়ের নির্যাতনের শিকার হয়ে কোনো হিন্দুর মৃত্যুর রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায় না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বা সহিংস সংখ্যালঘু নির্যাতন বলতে যা কিছু বুঝায় সেটা বাংলাদেশে আদৌ হয় না। যেসব অপকর্ম ও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগই ঘটায় আওয়ামী লীগ ও তাদের পালিত পান্ডারা।

ইন্ডিয়ায় মুসলিম বিদ্বেষী তৎপরতা ও সহিংসতা:

দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে কথিত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ইন্ডিয়ায়। মুসলিম দুনিয়ার দেশগুলো সচেতন না হওয়ায় ইন্ডিয়ার সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনাগুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে তেমন একটা আসে না। শুধুমাত্র ২০০২ ফ্রেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে সংঘটিত মুসলিম বিরোধী সহিংসতায় সরকারি হিসেবেই ২হাজারের বেশি মুসলিম মারা যায়।

সেদেশে সংঘটিত হাজার হাজার সাম্প্রদায়িক সহিংসতার মধ্যে একটি ঘটনার ইতিহাস বললেই অনেকে শিহরিত হয়ে ওঠবে। যাদের জন্ম ১৯৯০ সালের পর তাদের জানার জন্য ঘটনাটির উল্লেখ করতে হলো। ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ইন্ডিয়ার গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদ সিটির গুলবার্গ হাউজিং সোসাইটিতে হামলা চালিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে কংগ্রেস দলীয় সংসদ সদস্য এহসান জাফরিকে। তার বয়স ছিল ৭৩ বছর। এহসান জাফরীর অপরাধ কি জানেন? হিন্দুত্ববাদীদের মুসলিম বিরোধী সহিংসতার সময় তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে মুসলিম সম্প্রদায়ের কিছু অসহায় লোককে তার বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন।

সহিংসতার সময় মুসলিম মালিকানাধীন বেস্ট বেকারীতে আগুন লাগিয়ে ২০ জন নিরীহ মুসলিম শ্রমিককে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় গুজরাট রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আর.এস.এস নেতা বর্তমান ইন্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ধরণের জঘন্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও নৃশংসতার বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খুব কমই প্রচারিত হয়।

প্রায় প্রতিদিন সেদেশে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। গরুর গোশত বহনের দায়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেখানে প্রায় প্রতিদিন মুসলিমদের পিটিয়ে হত্যা করছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী জরবদস্তি মূলক মুসলিমদের জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিতে বাধ্য করার ঘটনা নিয়মিত খবরের শিরোনাম হয়।

কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের দিওয়ালী উৎসবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা মোটরবাইক আরোহী এক মুসলিম পরিবারের সদস্যদের শরীরে জবরদস্তি মূলক রং মাখিয়ে দেয়। মুসলিম পরিবারের সদস্যরা বার বার বলেছেন তারা মুসলিম। এরপরও উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা থামেনি। এ বিষয়ে মিডলইস্ট ভিত্তিক বিখ্যাত মিডিয়া আল জাজিরা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ইন্ডিয়ার উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় চারশ বছরের পুরনো বাবরী মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে রামমন্দির বানানোর ইতিহাস নাই বা বললাম।

আমাদের মধ্যে ইতিহাস চর্চা নেই বললেই চলে। এ জন্য আমরা মূল বিষয় জানার চেষ্টা করি না। সামান্য কিছু একটা ঘটলেই গেল রে গেল রে বলে চিৎকার করি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাচ্যূতির  সাথে সাথে কেন সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে আনা হয়? বিষয়টি অবশ্যই সবারই বিশদ জানার দরকার।

উগ্র হিন্দুত্ববাদী অপতৎপরতা ও আস্ফালন:

ইন্ডিয়ান মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ জন্মলগ্ন থেকেই এ দেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের অপব্যবহার করেছে। এ সুযোগে ইন্ডিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো তাদের অনুচরদের এ দলটিতে অনুপ্রবেশ করায়। এরা আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে উগ্র সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতা চালায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা পেলে এদের অপতৎপরতা ও আস্ফালন সকল সীমা ছাড়িয়ে যায়। এরা আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালায়। বিগত ১৬ বছর ধরে এ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর আস্ফালন সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এরা সুযোগের অপব্যবহার করে অনেক জায়গায় মুসলিম নির্যাতন করেছে। ফরিদপুরে ২ জন নিরীহ মুসলিম যুবককে হত্যার ঘটনায় এ উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হাত আছে।

বিবেকবান হিন্দুদের বোধোদয়:

আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে নানা অপকর্ম ও দুর্বৃত্তপনায় নিয়োজিত ইন্ডিয়ান মদদপুষ্ট উগ্র হিন্দুত্ববাদী পান্ডারা এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। মূলধারার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বোধোহয় হয়েছে যে, এদেশটা তাদের। বিপদে-আপদে তারা প্রতিবেশী মুসলিমদেরই পাশে পাবে। ইন্ডিয়ান উগ্র হিন্দুত্ববাদী পান্ডারা সীমান্ত পার হয়ে এসে তাদের রক্ষা করতে পারবে না। তাই এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় দিন দিন সচেতন হয়ে ওঠছে। এটা অবশ্যই আশাবাদী হবার কথা। আমরা চাই হিন্দু সম্প্রদায়ের কারো শরীরে একটি আঁচড় না লাকুক। এ দেশের নাগরিক হিসেবে তারা সবধরণের অধিকার ভোগ করবে এতে কারো বিন্দুমাত্র আপত্তি থাকার কথা নয়। এরপরও সনাতন হিন্দু ভাইদের বলবো অপশক্তির ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের পাঁয়ে নিজেরা কুড়াল মারবেন না। সচেতন হোন। যে কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই প্রতিবেশী মুসলিমদের জানান। তাদের সহায়তা নিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন। অপশক্তির ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না।

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী…

১৬ বছরের অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই…

সেনাবাহিনী নিয়ে কিছু জরুরি কথা