ফিলিস্তিনিরা আজ হতভাগ্য ও এতিম। তারা প্রায় ৭৫ বছর ধরে নিজেদের ভূখণ্ডে দখলদার ইহুদীদের হাতে মার খাচ্ছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ঝরছে রক্ত। লাশের পাহাড় আকাশ ছুয়েছে। ফিলিস্তিনিরা আজও মরছে। ফিলিস্তিনের এই অসহায় মুসলিমরা এই জনপদের আদিবাসী হওয়ার পরও তারা আজও নিজভূমে পরবাসী!
ফিলিস্তিন মধ্যপ্রাচ্যের দক্ষিণাংশের একটি ভূখণ্ড, যা ভূমধ্যসাগর ও জর্ডান নদীর মাঝে অবস্থিত( যেখানে বর্তমান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি ভূখন্ড অবস্থিত)। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা এই তিন মহাদেশের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানে রয়েছে ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের গ্রিক নাম প্যালেস্টাইন। ফিলিস্তিনের অপরাপর নামগুলো হলো-কেনান, জুডা, জুদাহ, জুদাই ইত্যাদি। এটি ইসলাম ধর্ম, ইহুদি ধর্ম ও খ্রিস্ট ধর্মের জন্মস্থান। আর এই তিনটি ধর্মের জনক হলেন ইব্রাহিম (আ.)। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইব্রাহিম (আ.) হলেন মুসলিম জাতির পিতা। খ্রিস্টান ধর্ম মতে, ইব্রাহিম(আ.)-এর বংশধর হলো যিশু অর্থাৎ ঈসা(আ.)। আর ইহুদি ধর্ম মতে, ইব্রাহিম(আ.)-এর বংশ হতেই মুসা(আ.) অর্থাৎ মুজেস-এর আগমন ঘটে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও তিনটি ধর্মের সূতিকাগার হওয়ায় স্বভাবতই ফিলিস্তিন নামক ভূখন্ডটির রয়েছে ধর্ম, সংস্কৃতি, বাণিজ্য ও রাজনীতির এক দীর্ঘ ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ইতিহাস। আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে জেরুজালেম নামক মরুশহরকে কেন্দ্র করে গড়ে ‘ফিলিস্তিন’ রাজ্য। গবেষকদের মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ সালের দিকে নুহ(আ.)-এর দৌহিত্র ও হ্যামের পুত্র কেননা প্রথম ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন। তার নামানুসারেই ফিলিস্তিনের প্রাচীন নাম হয় কেনান। কেনান ছিল তৎকালীন সময়ে ভূমধ্যসাগরের ওই অঞ্চলে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রধান। কালক্রমে কেনানের বংশধরেরা বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে ফিলিস্তিন ও এর আশপাশ এলাকায় বসবাস শুরু করে। বাইবেল মতে, ফিলিস্তিন বা কেনানীয় রাজ্যের সীমানা হলো-জর্ডান ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চল। বর্তমানে তা ইজরাইল, পশ্চিম তীর, লেবানন ও উপকূলীয় সিরিয়ার বিশাল ভূমি।
মরুশহর জেরুজালেম নামটির মধ্যে লুকিয়ে আছে অনেক ইতিহাস, ঐতিহ্য, বীরত্ব ও উত্থান-পতনের প্রতিচ্ছবি। তবে মুসলমানদের বসবাসের পূর্বে এই শহর দেখতে অনেকটা আতুড় ঘরের মতো ছিল। পৃথিবীর অন্যতম পবিত্রতর স্থান ফিলিস্তিন শহরে লুকিয়ে আছে ধর্মীয় আবেদনে ভরপুর প্রাচীন জনপদের হাজারো বছরের কথামালা। এই জেরুজালেম শহরের পূর্বাঞ্চলে রয়েছে, মুসা (আ.)-এর সমাধিগৃহ, মহানবী(সা.)-এর স্মৃতি বিজড়িত বাইতুল মুকাদ্দস মসজিদ ও হায়েতুল বুরাক বা বোরাকের দেয়াল। এই দেয়ালটিকে ইহুদিরা বলে-কান্নার দেয়াল। আর এই মসজিদকে মুসলমানদের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হিসেবে গন্য করা হয়। এই শহরের উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে খ্রিস্টানদের বানানো যিশুর সমাধিগৃহ। আর এসব কারণেই জেরুজালেম শহর ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের নিকট এত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ফিলিস্তিন ও ইজরাইল রাষ্ট্র নিয়ে বিশ্বময় যে দুই মেরুভিত্তিব সংঘাত, হানাহানি ও যুদ্ধ-তা মূলত এই মরুশহর জেরুজালেমকে কেন্দ্র করেই। একদা শান্তির আবাসভূমি জেরুজালেম তথা ফিলিস্তিন আজ নিত্য রক্তের বীভৎস খেলায় মত্ত।
সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের এই ভূখন্ডে বা এর কোন কোন অংশ বিভিন্ন গোষ্ঠী বা জাতির দ্বারা পরিচালিত ও শাসিত হয়ে আসছে। এদের মধ্যে আছে-কেনানীয়, প্রাচীন মিশরীয়, ব্যাবিলনীয়, পারস্য, প্রাচীন গ্রিক, রোমান, বাইজেন্টাইনীয়, উমাইয়া, আব্বাসীয়, সেলজুক, ফাতেমি, খ্রিস্টান ক্রুসেডার, আইয়ুবী, মামলুক, উসমানীয়, ব্রিটিশ এবং হাল আমলের ইসরায়েল। এর রকম বহু জাতি ও গোষ্ঠী। ব্যাপারটি দুঃখজনক এবং আশ্চর্যজনকও বটে!(চলবে)।
ব্যুরো চীফ: দেশ দর্শন
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized