বাংলা ভাষা আমাদের অহংকার। বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা বাঙালি জাতির এক অনবদ্য সৃষ্টি। পৃথিবীতে আর কোনো জাতি নেই যারা ভাষার জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করেছে। ভাষাবিদদের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে ছয় থেকে আট হাজার ভাষার প্রচলন আছে। এর মধ্যে বাংলা ভাষা পঞ্চম স্থানে রয়েছে। পুরো বিশ্বে এই ভাষায় মোট ৩০ কোটি মানুষ কথা বলে।
অথচ বাঙালি হয়েও এই ভাষায় আমরা শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারি না। এমনকি এই ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য শুদ্ধভাবে লিখতেও পারিনা! এটা আমাদের জন্য ভীষণ লজ্জার ব্যাপার বটে।
বাংলা একাডেমি, বিশ্বভারতী, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডসহ এপাড় ওপাড় বাংলায় আরো কিছু প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা প্রমিত (শুদ্ধ) বাংলা বানানের নিয়ম সম্পর্কিত নানান বই প্রকাশ করেছে। কিন্তু শুদ্ধভাবে বাংলা উচ্চারণ করার কোনো বই আমার জানা মতে, কোনো লেখক ও গবেষক আজ পর্যন্ত বের করতে পারেনি। তবে আমার জানা মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস শুদ্ধভাবে বাংলা উচ্চারণের একটিমাত্র বই প্রকাশ করেছেন। কাজটি খুবই দুরূহ ও জটিল। এটা সম্পূর্ণ মৌখিক (শারীরিক) ব্যাপার। শুধু বই নয়, সরাসরি শিক্ষকের কাছ থেকে এটার তালিম নিতে হয়। বাস্তবে এটা করা সত্যিই অসম্ভব। আর এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব করে তুলেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়াস্থ `মদিনাতুত তাহফিজ ইন্টারন্যাশনা মাদ্রাসা` ও `দেশ দর্শন` পত্রিকা কর্তৃপক্ষ।
আদ-দাঈ সাহিত্য একাডেমির
তত্ত্বাবধানে তারা বাংলা ভাষার একটি বুনিয়াদী কর্মশালার আয়োজন করে। ঢাকা থেকে এটি সরাসরি পরিচালনা করেন উক্ত একাডেমির পরিচালক ও প্রতিষ্ঠাতা জামিল আহমাদ আল জামি। তাদের সমন্বিত উদ্যোগে এ ধরনের কর্মশালা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে শুরু হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে এ ধরনের কর্মশালা আগে কখনো হয়নি! গত ৪ মে বিকাল চার টায় শহরের কলেজপাড়াস্থ মদিনাতুত তাহফিজ ইন্টারন্যানাল মাদ্রাসার হলরুমে এই মহতী ও সৃজনশীল কর্মশালার শুভ উদ্বোধন হয়।
এই কর্মশালা চলছিল লাগাতার সাতদিন পর্যন্ত। কিন্তু ঈদের ছুটির কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অনেক উৎসাহী লোক এই মহতী কর্মশালায় অংশ নিতে পারেননি। উক্ত অনুষ্ঠানে আমি (খায়রুল আকরাম খান) দেশ দর্শন পত্রিকার পক্ষ থেকে প্রতিনিধিত্ব করি। অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেখে আমিসহ অন্যান্য অতিথিতারা বেশ অভিভূত ও অনুপ্রাণিত হই।
পরবর্তীকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের যে কেউ এই সুন্দর ও সৃজনশীল কর্মশালায় যেকোনো সময় একটি নির্দিষ্ট ফি দিয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে শুদ্ধভাবে বাংলা উচ্চারণ ও শুদ্ধভাবে বাংলা বানান আয়ত্তকরণের মূল্যবান জ্ঞান অর্জন করতে পারেন। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা গোষ্ঠী এই ধরনের কর্মশালার আয়োজন করতে চান, তাহলে দয়া ` করে দেশ দর্শন` পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবেন।
এই মহতী কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে, আপনারা বাংলা ভাষায় শুদ্ধভাবে কথা বলা, বক্তৃতা দেওয়া, আবৃত্তি করা, লেখালেখি করা, অভিধান ব্যবহার, উপস্থাপনা ইত্যাদি সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন এবং এই অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা আপনার পেশাগত, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনকে আরো গতিময় ও ঐশ্বর্যশালী করবে।
খায়রুল আকরাম খান
লেখক, কলামিস্ট
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized