সেনাবাহিনী যে কোনো দেশের হৃদপিণ্ড। দেশের যে কোনো গুরুতর সঙ্কটে প্রথমে সেনাবাহিনীকেই এগিয়ে আসতে হয়। সেনাবাহিনী যে এদেশের মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতিক সেটা ১৯৭১, ১৯৯০, ১৯৭৫ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে বাস্তবে প্রমাণ করে দেখিয়েছে।তবুও সেনাবাহিনী নিয়ে বেশকিছু জরুরি কথা বলা বাকি আছে। সেগুলো বলতে হবে। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া আমাদের সহযোগিতা করেছে। এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে ইন্ডিয়া সৎ উদ্দেশ্যে যে সহযোগিতা করেছে সেটাও হলফ করে বলা যায় না।
দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বলতে হচ্ছে যে, ইন্ডিয়া দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তার ও বাংলাদেশকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখার কুমানসে বাংলাদেশ ও এদেশের সেনাবাহিনীকে বার বার বিপদগামী করার অপচেষ্টা করেছে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে ইন্ডিয়া আর তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ২০০৭ সালে মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্রের কাঁধে বন্দুক রেখে ইন্ডিয়া এদেশের প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে তার প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুলত আওয়ামী লীগকে ব্যবহার করে দিল্লি থেকেই বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে ইন্ডিয়া। ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে তামাশাগুলো যে ইন্ডিয়ার মদদ ও ইন্ধনেই হয়েছে সেটা না বললেও চলে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা নেয়ার অল্প কিছুদিন পর ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের নামে মাস্টারপ্লান করে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নির্মম ও নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। এরপর কথিত বিডিআর বিদ্রোহের বিচারের নামে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে ৫৬ জন বিডিআর জওয়ানকে হত্যা করা হয়েছে। শেষ করে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে ইন্ডিয়ান সীমান্ত রক্ষিবাহিনী বিএসএফ শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি বিডিআরকে।
ইন্ডিয়ান মদদ ও ইন্ধনে সেনাবাহিনীকে হাসিনার একটি আজ্ঞাবহ বাহিনীরূপে প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিএফআইকে রাজনীতিকরণ ও বিপদগামী করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা এমনকি সেনাবাহিনীর অফিসারদের পর্যন্ত গুম-অপহরণের কাজে ব্যবহার করা হয় পুরোদম। বিএনপির জনপ্রিয় নেতা ইলিয়াস আলী, বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আজমী, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেমকে গুম করা হয়।
২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে গাড়িতে করে বনানীর বাসা থেকে বের হন ইলিয়াস আলী। এ সময় তার সাথে ছিলেন গাড়িচালক আনসার আলী। রাত ১২টার পর মহাখালী থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ইলিয়াস আলীর প্রাইভেট কারটি উদ্ধার করে পুলিশ। তখন গাড়িতে ছিলেন না ইলিয়াস ও তার গাড়িচালক। এরপর থেকে এ যাবৎ ইলিয়াস আলীর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০১৬ সালের ৪ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনের রাস্তা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে কয়েক ব্যক্তি হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান বলে তখন তার আইনজীবী ও পরিবার অভিযোগ করেছিল। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ব্যারিস্টার আহমাদ বিন কাসেম আরমানকে নিজ বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় মিরপুর ডিওএইচএসের ১১ নম্বর সেকশনের ৭ নম্বর রোডের ৫৩৪ নম্বর বাড়ির দোতলায় থাকতেন তিনি।
এ বাসা থেকেই দুই শিশুসন্তান, স্ত্রী ও বোনের সামনে থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর আর তাঁর হদিস পাওয়া যায়নি। এর কয়েকদিন পর ২৩ আগস্ট আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে গুম করা হয় বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার।
২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মিডলইস্ট ভিত্তিক বিখ্যাত মিডিয়া আল-জাজিরায় বাংলাদেশের ৩ রাজনৈতিক নেতার ছেলেদের নিখোঁজের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রখ্যাত ব্রিটিশ আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান আল জাজিরাকে বলেছিলেন, গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং মীর কাশেম আলীর ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেমের গুমের পেছনে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিএফআই-এর হাত রয়েছে।
ব্রিটিশ আইনজীবী ক্যাডম্যান বলেছিলেন, তিনি মনে করছেন এ তিনজনকে অপহরণ ও গুমের পেছনে ডিএফআই-এর হাত রয়েছে এবং তারা বর্তমানে এ সংস্থাটির হাতেই বন্দি আছেন। তিনি আরো বলেছিলেন, এ তিনটি গুমের ঘটনা একটির সাথে আরেকটির খুবই মিল রয়েছে। এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হবার ৫দিন পর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ২ মার্চ ভোরে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে তার ধানমন্ডির বাড়ীর পাশে ফেলে রেখে যান গুমকারিরা।
অন্য দুইজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী ও মীর আহমেদ বিন কাশেম-এর কোনো খোঁজ ছিল না দীর্ঘদিন। সেনাবাহিনীর আরেক অফিসার লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান গুম থেকে ফিরে এসে একটি টক-শোতে বলেছিলেন আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী বেঁচে আছেন। তিনি তাকে দেখেছেন। তিনিও গুম বা নিখোঁজের ১৮ মাস পর ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফিরেছেন।
হাসিনুর রহমান চট্টগ্রামে র্যাব ৭-এর ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। জঙ্গিগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ থাকার অভিযোগে তাকে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তবে সংবাদ সম্মেলনে তার পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, হাসিনুর একজন দেশপ্রেমিক সৈনিক ছিলেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেদিন রাতে সেনাবাহিনীর সাবেক কয়েকজন অফিসার এবং বিভিন্ন সময়ে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনরা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কচুক্ষেতে সমবেত হয়ে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা পরিদপ্তর ডিএফআই-এর ‘আয়নাঘরের বন্দিদের’ মুক্তির দাবি জানান। এরপরই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আযমী ও মীর আহমেদ বিন কাশেম মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন।
বিএনপি নেতা আলী ইলিয়াস এখনো নিখোঁজ। তার পরিবার এখনো তার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। মানুষ মারা গেলে পরিবারের সদস্যরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে মনকে বুঝাতে পারে। কিন্তু যারা গুম বা নিখোঁজ হয় তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন হয়ে যায় দুর্বিষহ। তারা মনকে কোনো কিছুই বুঝাতে পারে না।
এসব গুম-অপহরণের পেছনে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার হাত আছে বলে অভিযোগ ওঠেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়। বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতা না থাকায় এসব বিষয় নিয়ে কোনো কিছু প্রকাশিত হয়নি।
বাক স্বাধীনতা না থাকায় এবং জেল-জুলুমের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি। দুই একজন সাংবাদিক-লেখক সাহস করে সত্য প্রচার ও লেখার চেষ্টা করলে তাকে আটক করে সাজানো মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখা হতো।
ডিএফআইকে দিয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ও লাভজনক ইসলামী ব্যাংক দখল করা হয়েছিল। সেনাশাসক জেনারেল এইচএম এরশাদ তার ৯ বছরের শাসনে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে যে পরিমাণ অপব্যবহার করেছেন-হাসিনা একজন সিভিল শাসক হয়ে তার চেয়ে হাজারগুণ বেশি অপব্যবহার করেছেন।
হাসিনা তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে ধ্বংস করেছেন। ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র)-এর মদদ ও ইন্ধনে সেনাবাহিনীকেও ধ্বংস করার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। এ বাহিনীকে ধ্বংস করতে পারেননি। তবে এ বাহিনীর সীমাহীন ক্ষতি করে গেছেন।
সোর্ড অব অনার পুরস্কার পাওয়া সেনাবাহিনীর অফিসার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আল আজমী ও আরেক মেধাবী অফিসার লে. কর্ণেল হাসিনুর রহমানকে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার তৈরী করা আয়নাঘরে বন্দি থাকতে হবে এটা কি কল্পনা করা যায়?
সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিএফআইকে দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের গুম-অপহরণ করে এ বাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো হয়েছিল। সেনাবাহিনীকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে আসার আগেই এ বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি বুঝে জনগণের মুখোমুখি হয়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে সেনাবাহিনীর বিচক্ষণতায় হাসিনা তার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার দুঃস্বপ্ন পুরণ করতে পারেননি। দেশের হৃদপিন্ড সেনাবাহিনী ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে গেছে।
ব্যাংক দখলে নেয়া এবং রাজনৈতিক দলের নেতাদের গুম-অপহরণ করা এবং টাকা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কমেন্টার ভাড়া করা সেনা গোয়েন্দা সংস্থার কাজ হতে পারে না। দেশের নিরাপত্তা ও বর্হিশক্তির ষড়যন্ত্র থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করাই তাদের আসল কাজ।
হাসিনার নির্দেশে সেনাবাহিনী ও সেনা গোয়েন্দা সংস্থাকে ধ্বংস করার অন্যতম প্রধান কারিগর শেখ রেহানার দেবর ও হাসিনার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা সেনাবাহিনীর ইঞ্জিয়ারিং কোরের মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী। এ সংস্থাকে অপব্যবহারের মাধ্যমে গুম-অপহরণ ও ব্যাংক দখলের মতো বেআইনী কাজ ও নানারকম অপকর্মে জড়ানোর অপরাধে এ তারেক সিদ্দিকীর কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।
অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, আওয়ামী লীগের লুটেরা নেতারা বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে বা লুকিয়ে আছে। তাদের আটক করা বিশেষ জরুরি। কারণ তারা দেশের অনেক সম্পদ ও টাকা-পয়সা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। তারা একেক জন শত-হাজার কোটি টাকার মালিক। তাদের আইনের আওতায় আনতে বিলম্ব করলে লুটের টাকা দিয়ে তারা অন্তর্ঘাত করে আবারো দেশে অরাজকতা তৈরী করার অপচেষ্টা চালাতে পারে। কিছু গুপ্তচরও বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আত্মগোপনে থাকতে পারে। কারণ বিহত ১৬ বছর যাবৎ এসব গুপ্তচরদের কুপরামর্শ, মদদ ও ইন্ধনে আওয়ামী লীগ সরকার দেশ চালিয়েছে। এদেরও ধরতে হবে। বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সে যাই হোক ইন্ডিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার মদদ ও ইন্ধনেই হাসিনা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়ে বহু বেআইনী কাজ ও অপকর্ম করিয়েছে। এসব অপকর্মে অনেক সেনা সদস্য জড়িত হয়ে সেনাবাহিনীর পোশাককে কলঙ্কিত করেছেন। অপকর্মে জড়িত কিছু সংখ্যক সদস্যের দায়ভার পুরো বাহিনী কেন নেবে? নানারকম অপকর্মে জড়িত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানকে ইতিমধ্যে সেনাবাহিনী থেকে অপসারণ করা হয়েছে। বাদবাকি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদেরও সেনাবাহিনী থেকে অপসারণ করে এ বাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত করার সময় এসেছে। দেশকে এখন নতুন রূপে গড়ে তুলতে হবে। দেশ গড়ার অংশ হিসেবে শুদ্ধি অভিযান সেনাবাহিনী থেকে শুরু করা হোক। এটাই গণমানুষের দাবি।
প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়ার কোনো ষড়যন্ত্র যেন সেনাবাহিনীকে স্পর্শ করতে না পারে সে বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। অতীতের সকলপ্রকার অনিয়ম-অনাচার ভুলে গিয়ে সেনাবাহিনী আরো শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশের গণমানুষ সেনাবাহিনীর পক্ষে আছে। অতীতের যে কোনো সঙ্কটে সেনাবাহিনী জনগণের সাথে বুক মিলিয়ে যেভাবে এগিয়ে এসেছে-জনগণও ঠিক সেভাবে সেনাবাহিনীর পাশে থাকবে ইনশাহআল্লাহ।
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized