বৃহস্পতিবার দুপুর ১২:২৯, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী

সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী বিচারপতি পদে বহাল: স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় হুমকি

২০২ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি
হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ:
বর্তমান হাইকোর্টের বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবু আগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) করতেন। পরে ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে সে দলের নেতা হন। তিনি এলেবেলে কোনো ছাত্রলীগ নেতা নন। ছাত্রলীগের টিকেটে রাকসুর জিএস হয়েছিলেন।
মোঃ আসলাম রাজশাহী ইউনিভার্সিটির ছাত্র। তিনি আব্দুল লতিফ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে বেশ সুনাম ছিলো তার।
১৯৮৮ সালের ১৭ নভেম্বর আব্দুল লতিফ হল দখলের ঘটনায় রুহুল কুদ্দুস বাবু গ্রুপের সাথে অন্য গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। সে সংঘর্ষের সময় আসলামকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র হত্যার যে কোন ঘটনার পরই অভিভাবক শ্রেণির অভিযোগ হলো: তোরা পলিটিক্স করিস কেন? মা-বাবা কতো কষ্ট করে তোদের লেখাপড়া করায়। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করতে পাঠায়। তোরা পলিটিক্স করে পরিবার ধ্বংস করিস ইত্যাদি। এর পেছনে যে, আরো অনেক বিষয় আছে সেগুলো অভিভাবকদের অগোচরে থেকে যায়।
আসলাম হত্যাকান্ডের পরদিন ১৮ নভেম্বর বোয়ালিয়া থানায় একটা হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নাম্বার ১৪, তারিখ ১৮ নভেম্বর ১৯৮৯ইং। মামলায় ৩০ জনকে আসামী করা হয়। হত্যাকান্ডের পর তৎকালীন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহ আলমের নেতৃত্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মামলার এজাহারে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন জাসদ ছাত্রলীগ নেতা রুহুল কুদ্দুস বাবু কিরিচ দিয়ে আসলামকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
তদন্ত শেষে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৬ জনকে বাদ দিয়ে ১৪ জনের নামে পুলিশ চার্জ গঠন করে। চার্জশিটে রুহুল কুদ্দুস বাবু ১নাম্বার আসামী। চার্জ গঠনের শুনানি শেষে চার্জশিট থেকে কয়েকজনকে বাদ দেয়া হয়। চার্জশিটের আসামীকে বাদ দেয়াকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিভিশন দায়ের করা হয়। হাইকোর্ট চার্জশীটের কাউকে বাদ না দেয়ার নির্দেশ দেন। এ রায় দেয়া হয় ২০০৯ সালের ২ জুলাই।
মামলাটি রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ কোর্টে বিচারাধীন থাকে। মামলা নাম্বার ২৫৯/২০০২।
এ মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় যায়। ২০১০ সালের ৮ এপ্রিল আওয়ামী সরকার আদালতে প্রভাব খাটিয়ে এ মামলা থেকে রুহুল কুদ্দুস বাবুসহ ৯ জনের নাম প্রত্যাহার করায়।
২০১০ সালের ১১ এপ্রিল রুহুল কুদ্দুস বাবুসহ ১৭ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়। রুহুল কুদ্দুস বাবুর নিয়োগ নিয়ে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রতিবাদের মুখে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম বাবুকে শপথ পাঠ করাননি।
বিচারপতি ফজলুল করিমের অবসরের পর প্রধান বিচারপতি হন বহুল আলোচিত ও কুখ্যাত এবিএম খায়রুল হক। যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে আওয়ামী লীগকে সীমাহীন অরাজকতা করার সুযোগ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ২০১০ সালের ৪ নভেম্বর রুহুল কুদ্দুস বাবুকে হাইকোর্টের বিচারপতি পদে শপথ পড়ান।
নতুন নিয়োগ পাওয়া অতিরিক্ত বিচারপতিদের মধ্যে হত্যা মামলার প্রধান আসামী রুহুল কুদ্দুস বাবুসহ সবাই আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা। আবু জাফর সিদ্দিকী কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (১৯৯৭-২০০১)
জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের জুনিয়র। খসরুজ্জামান আওয়ামী প্যানেল থেকে নির্বাচিত সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি। খসরুজ্জামান ২০০৬ সালের ৩০শে নভেম্বর লাথি মেরে প্রধান বিচারপতির এজলাসের দরজার কাঁচ ভেঙ্গেছিলেন। একই সময়ে তিনি জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছিলেন।
এরপর পর্যায়ক্রমে আরো ৫৭ জন আওয়ামী লীগ দলীয় লোককে হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছিলো। তারা এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।
এর আগেও দলীয় বিবেচনায় বিচারপতি নিয়োগের ইতিহাস আছে। কিন্তু হত্যা মামলার প্রধান আসামীকে বিচারপতি নিয়োগের ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম। দুনিয়ার অন্য কোনো এ ধরণের ঘটনার নজির নেই।
কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না:
কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না-বহুল প্রচলিত বাংলা প্রবাদ। রুহুল কুদ্দুস বাবুর ক্ষেত্রে এ প্রবাদটি শতভাগ মিয়ে যায়। হত্যা মামলার আসামী রুহুল কুদ্দুস বাবু বিচারপতির আসনে বসেই ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মামলা থেকে খালাস দেয়া শুরু করেন।
বিগত ১৬ বছরে বহু রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড আরেকটি বহুল আলোচিত রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানী পুরনো ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দিনে দুপুরে ছাত্রলীগের পান্ডারা বিশ্বজিৎ দাসকে অন্ধকার যুগের মতো কুপিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করে। তারা সন্দেহ করেছিলো বিশ্বজিৎ শিবির কর্মী। শিবির সন্দেহের কারণ হলো বিশ্বজিৎ-এর মুখে হালকা দাড়ি ছিলো। সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী ছাত্রলীগের পান্ডারা কিরিচ দিয়ে কোপানোর সময় বিশ্বজিৎ বার বার বলেছিলো আমি হিন্দু। ছাত্রলীগের পাষন্ডরা তার কোনো কথাই শুনেনি। বিশ্বজিৎ দাস পেশায় একজন দর্জি ছিলেন। আওয়ামী লীগের পতনের পর অনেকেই এখন সংখ্যালঘু নির্যাতনের জিগির করছেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের সময় তারা কোথায় ছিলেন? আমরা তাদের মুখে টু শব্দ শুনতে পাইনি।
অনেকগুলো ক্যামেরার সামনে এ নৃশংস ঘটনাটি ঘটে। তাকে নির্মম ভাবে হত্যার দৃশ্য মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এ হত্যাকান্ডের এক বছর পর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার রায় দেয়া হয়। এ রায়ে ২১ জন আসামীর মধ্যে আট জনের মৃত্যুদন্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়।
৮ জন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মধ্যে ছাত্রলীগের ৬জন নেতা-কর্মীকে মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই দেন বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস বাবু ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া এসব বিচারপতি সবসময় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগই থাকবে। কোনোদিনই মানুষ হবে না।
বিতর্কিত বিচারপতিদের সরানো দরকার:
বর্তমান অন্তবর্তি প্রধান উপদেষ্টা ড. মোঃ ইউনুস বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে জনগণের আস্থায় আনা তার অন্যতম অগ্রাধিকার।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ছাত্রলীগ সাবেক সভাপতি খিজির হায়াত, খুনের মামলার প্রধান আসামী রুহুল কুদ্দুস বাবু, সন্ত্রাসী হিসাবে খ্যাত খসরুজ্জামানসহ আওয়ামী লীগের এসব লোকজন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থার জন্য বিপদজনক।  মাফিয়া রানী হাসিনা দেশে তার চিরস্থায়ী মাফিয়াতন্ত্র কায়েমের জন্য তার দলীয় দুর্বৃত্ত চরিত্রের লোকদের বিচারপতি নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন যে, আসমানের ওপরে একজন বসে রয়েছেন। ফাইনাল বিচারের ফয়সালা একমাত্র তার হাতে।
বিগত ১৬ বছর যাবৎ দেশের বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিলো তার অন্যতম স্বাক্ষী স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা। নিরপেক্ষ ও ইনসাফ ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থার জন্য আওয়ামী দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ করা বিচারপতিরা বড় হুমকি। সুতরাং বিতর্কিত এসব বিচারপতিদের দ্রুত সরানোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার। যতো দ্রুত এদের সরানো যাবে ততোই দেশের মঙ্গল।

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

মব জা‌স্টিস : প্রেক্ষিত বাংলা‌দেশ

সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী…

১৬ বছরের অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই…