উল্লেখ্য, গত ২৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার কারখানায় লুটপাট করে একদল লোক সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে আগুনে পুড়ে প্রায় ১৭৬ জন শ্রমিক মারা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কারা কারখানায় আগুন লাগিয়ে দিল? কারখানায় কর্মরত ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ছিল, এখন তারা কোথায় যাবে? গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-ভাঙচুর-লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট ধাক্কা।
আগুন দেওয়ার মতো কাজ কোনো সভ্য সমাজের মানুষ করতে পারে না। গাজী সাহেব অপরাধ করলে, তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু কেন তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সব লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হলো!! প্রতিহিংসার ফলে দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। দেশের স্বার্থে এ রকম প্রতিহিংসার কাজ অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত বন্ধ করতে হবে।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়াী লীগ সরকারের পতনের পর পরই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির প্রধান কার্যালয়টি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বিএনপিপন্থী পরিবহন নেতারা। এত দিন এটি আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল। কেবল কেন্দ্রীয় অফিস নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা মালিক সমিতির নেতৃত্বেও পরিবর্তন এসেছে। এরই মধ্যে ঢাকার বাইরে সকল জেলা-উপজেলায় অবস্থিত বাস ও ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়গুলো বিএনপিপন্থীরা দখলে নিয়েছেন। গত মার্চে প্রকাশীত টিআইবির প্রতিবেদ অনুসারে, সারা দেশে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস-মিনিবাস-ট্রাক থেকে বছরে ১ হাজার ৫৯ কোটি টাকা চাঁদাবাজি হয়। অবাক হওয়ার বিষয়, ক্ষমতার পালাবদল হলেও সড়ক পথের এই চাঁদাবাজী কখনো বন্ধ হয় না!! এ খাতের ব্যক্তিরা এতটাই ক্ষমতাবান যে তারা সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সাহস পান। এখন প্রসঙ্গক্রমে প্রশ্ন আসে-পরিবহন খাতে বহু বছর ধরে চলে আসা এই চাঁদাবাজি ও দখলবাজি বন্ধ হবে কি না? চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ভাগাভাগির রাজনীতিও বন্ধ হবে। এই খাতের শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি পাবেন। পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরবে। সাধরণ মানুষও ভাড়া-নৈরাজ্য থেকে রেহাই পাবে। অন্তর্বর্তী সরকার যে রাষ্ট্র সংস্কার করতে চাইছে, পরিবহন খাত দিয়েই সেটা শুরু করা যেতে পারে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর চারদিকে যখন সবাই বিজয় উৎসবে ব্যস্ত, ঠিক তখনই একদল মানুষ এত দিনের পুঞ্জীভূত দুঃখ-কষ্ট ও ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে দেশব্যাপী শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ও ম্যুরল ধ্বংস শুরু করে। আর এই সুযোগে কিছু উগ্রবাদী ও লুন্ঠনকারীরা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাসংগ্রামের ওপর গড়ে ওঠা ভাস্কর্য ও ম্যুরাল ধ্বংস করেছে। তারা ধ্বংস করেছে রাজধানীর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য মৃণাল হকের ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াগাড়ি ও রিকশা ভাস্কর্যটি। দুবৃর্ত্তরা ময়মনসিংহের শশীলজের ভেনাসের মূর্তি, সুপ্রিম কোর্টর থেমিস ও শিশু একাডেমির দূরন্ত ভাস্কর্যটিও ধ্বংস করে দিয়েছে। উগ্রবাদীরা ধ্বংস করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থিত শামীম সিকদারের স্বাধীনতাসংগ্রাম ভাস্কর্যটি। ময়মনসিংহের জয়নুল সংগ্রহশালার সামনে থাকা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ মূর্তিটিও দুবৃর্ত্তদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিতে আগুন দিয়ে তা পুড়িয়ে দিয়েছে। দুবৃর্ত্তরা বিশ্ববরেণ্য চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের রাজশাহীর পৈত্রিক বাড়িটিও সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে। ঋত্বিক ঘটক ছিলেন অবিভাজ্য বাঙালি। তাঁর শৈশবের একটা বড় সময় কেটেছে রাজশাহীর এই পৈত্রিক বাড়িতেই। এসব লক্ষণ ভালো নয়। শত শত মানুষের জীবনের বিনিময়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, এসব উগ্রবাদী-লুন্ঠনকারী ও সুযোগসন্ধানীদের অপকর্মের কারণে যেন সে বিজয় হাতছাড়া না হয়, সেদিকে সর্তক দৃষ্টি রাখতে হবে সবাইকে।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রায় এক মাস ধরে নানা ধরনের মামলা দেখা যাচ্ছে। এর বেশির ভাগই ৩০, ৪০ ও ৫০ জনের বেশি করে আসামি। ক্রিকেট তারকা সাকিব আল আহসানের বিরুদ্ধে গার্মেন্টস কর্মচারী হত্যার অভিযোগে মামলা দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিত্রনায়ক জায়েদ খান, উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়, ফুটবলার সালাউদ্দিন ও অভিনেতা সাজু খাদেমের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হত্যা চেষ্টা মামলায় আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এগুলো রাগ বা ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এইদিকে গণহারে মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিবর্গকে আদালতে হাজিরার সময় যথেষ্ট নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে না। বেশ কয়েক দিন আগে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি আদালত প্রাঙ্গণে লাঞ্ছিত হয়েছেন। একজন নারী হিসেবেও তাঁর যে মর্যাদা ও সুরক্ষা পাওয়ার কথা, সেটি দিতে সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থ হয়েছেন। গত ২৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক শামসুদ্দীন আহমদ মানিক বেধড়ক মারধর ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন সিলেটের আদালতে তোলার সময়। মারধরে তিনি গুরুতর আহত হয়েছেন এবং এজন্য তাকে অস্ত্রোপচারও করতে হয়েছে। এছাড়াও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া প্রায় সবাই আদালত চত্বরে কিল-ঘুষি-লাথির মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁদের দিকে ইটের টুকরা, ডিম ও জুতা ছুড়ে মারা হয়েছে!! এই চিত্র মোটেই ভালো কিছুর লক্ষণ বহন করে না। বিগত সরকারের আমলে একই পরিস্থিতির শিকার হওয়ার কারণে ক্ষোভের বশে প্রতিশোধমূলকভাবে যদি এখনো একই কায়দায় আদালত পরিচালিত হয়, তাহলে এই গণ-অভ্যূত্থানের চেতনার অবশিষ্ট আর রইল কী? এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দ্রুত বিচারব্যবস্থা সংস্কার করা দরকার। আদাল এলাকায় এমন একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে, যাতে প্রত্যেকে তাদের মামলার মুখোমুখি হতে নিরাপদ বোধ করে। সবাই যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পায়। এছাড়াও ‘ক্যাঙারু কোর্ট’-এই অপবাদ থেকে বিচার বিভাগকে মুক্তি দিতে হবে।
শিক্ষাঙ্গনগুলোয় চরম নৈরাজ্য ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। একশ্রেণির শিক্ষার্থী সমাজের কুচক্রী ও দুস্কৃতিকারীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। তাদেরকে হেনস্তা করছে। জোর করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নিচ্ছে। কখনো জুতার মালা গলায় পরাচ্ছে। কখনো আবার গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখছে। অনেক জায়গায় শিক্ষকদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হচ্ছে। বেশিক ভাগ ক্ষেত্রে দুর্নীতি কিংবা দলপ্রীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দ্বারা পাইকারিভাবে শিক্ষকদের এমন লাঞ্ছনা পূর্বে আমাদের দেশে কখনো দেখা যায়নি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কোনো শিক্ষক যদি অতিরিক্ত দলবাজি করে থাকেন, কিংবা কারও বিরুদ্ধে যদি কোনো সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকে, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরিও বটে। তবে সেটা না করে ঢালাওভাবে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক ও বেআইনিভাবে পদত্যাগ করানো চরম অবক্ষয়েরই বহিঃপ্রকাশ। যত শিগগির সম্ভব এই হঠকারী অবস্থান থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আনা দরকার।
শিক্ষার্থীরা একটা রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে, রাজপথে প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেছে, রাস্তাঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করেছে, এখন ত্রানকার্যক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে-এসব সেবামূলক কাজ করে তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তবে তাদের আসল কাজ হলো লেখাপড়া করা। তাই শিক্ষার্থীদের বই ও ক্লাসরুমমুখী করা দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো শিক্ষকদের কর্মবিরতী পালন, কোটা আন্দোলন ও ভিসি ও প্রক্টরদের পদত্যাগের কারণে ১ জুলাই থেকে সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
সুতরাং যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অন্যান্য পদাধিকারী পদত্যাগ করেছেন, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলয়, প্রক্টর ও শূন্যপদে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তা দ্রুত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে আর সময় নষ্ট করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে যারা প্রত্যক্ষ সমর্থন দেয়নি বা অংশগ্রহণ করেনি, তাদেরকে সরাসরি ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে বয়কটের আহ্বান জানানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের নিয়ে ট্রল করা হচ্ছে। অনেক উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, মিডিয়াকর্মী, খেলোয়াড়, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, কবি, লেখক, অভিনয়শিল্পীসহ আরো অনেকে শিক্ষার্থীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এটা এক ভয়ংকর সর্বনাশা ধারা। এভাবে সমাজের একটা বড় অংশকে অকারণেই শক্রপক্ষে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ভিন্নমত বা দর্শনকে এভাবে অপদস্ত করা অনুচিৎ। এধরনের প্রতিহিংসামূলক মানসিকতা বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য মোটেই সহয়ক নয়।
বস্তুত, পরশ্রীকতরতা, অসহিষ্ণুতা, অপহরন, হত্যা, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি সংস্কৃতি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি আদর্শহীন জায়গায় নিয়ে গেছে। প্রতিশোধ নিতে গিয়ে প্রতিটি পরবর্তী সরকারই পূর্ববর্তী সরকারের অপকর্ম অন্ধভাবে অনুসরণ করছে। কেউই এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেছ না। অথচ মহানবী (সা.) ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পর বিরোধীপক্ষকে নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি সেখানে যাবতীয় অনাচার-অবিচার-অনিয়ম-বৈষম্য দূর করে ন্যায় ভিত্তিক একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সুতরাং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য আমাদেরকেও মহনবী(সা.)-এর মতো ক্ষমাশীলতা, ধৈর্যশীলতা, দৃঢ়তা, সততা ও একতার গুণাবলী অর্জন করতে হবে। অতএব, শাসনতন্ত্র সংস্কারের পাশাপাশি আমাদের মানসিকতাও বদলাতে হবে।
প্রসঙ্গত, ১৫ বছরের শাসনামলে সবকিছু দলীয়করণ এবং আকাশসম দুর্নীতির যে পরিচয় আওয়ামী লীগ রেখে গেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে বেশ সময় লাগবে। কিন্তু সেই সঙ্গে এ কথাও বলতে হবে, যে অঙ্গীকার নিয়ে আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই অঙ্গিকার রক্ষা করেছে ক্ষমতায় বসা কোনে শাসক দল? আওয়ামী লীগ? বিএনপি? বিএনপি-জামায়াত? জাতীয় পার্টি?
মূলত যে যত কম সময় ক্ষমতায় থেকেছে, সে তত ছোট স্বৈরাচার আর যে যত বেশি সময় ক্ষমতার থেকেছে, সে তত বড় স্বৈরাচার হয়েছে। এটা তো দিবালোকের মতোই সত্য এবং সর্বজন স্বীকৃত।
শঙ্কা থাকে, যদি রাজনীতির এই চরিত্রের কোনো পরিবর্তন না হয়, তাহলে অপশাসনের ধারাবাহিকতা চলতেই থাকবে। ক্ষমতার শুধু পালাবদল হবে, নতুন কিছু হবে না। নতুন নতুন স্বপ্ন দেখবে মানুষ, সেই স্বপ্নের সমাধিও রচিত হবে। কিন্তু দেশের জনগণ আবার কোনো নতুন স্বৈরাচারী ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চায় না।তারা চায় সুখে-শান্তিতে অন্তত ডাল-ভাত খেয়ে নিশ্চিন্ত জীবন যাপন করতে। মানুষের বদ্ধমূল ধারণা এবার তাদের সেই ইচ্ছা পূরণ হবে।
আশার কথা হচ্ছে, এই অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মধ্যে বেশ কিছু ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে রাহুমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আর্থিক খাতের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে কমিটি গঠন করেছে। কালোটাকা সাদা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে টাস্কর্ফোস গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তিস্তাসহ ৫৪ টি নদীর পানিবন্টন নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিচার বিভাগসহ সকল সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রদান বাধ্যতামূলক করেছে। সকল রাজনৈতিক দল, আমলা, গণমাধ্যকর্মী, ছাত্রসংগঠনসহ অন্যদের সাথে সংবিধান সংস্কার ও সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোনের সময় হত্যাকান্ডসহ সামগ্রিকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তের জন্য জাতিসংঘকে যুক্ত করেছে।
বলবার অপেক্ষা রাখে না যে, বিগত দিনগুলোর কোনো সরকারই এধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো কখনো নেয়নি। তাই সাধারণ মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা ও আশা তৈরি হয়েছে যে, এই সরকার শুধু শাসনতান্ত্রিক সংস্কার ও সংশোধন নয়; বরং যাবতীয় অনাচার-অবিচার-অনিয়ম দূর করে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় একটি উদার, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ ও বৈষম্যহীন দেশ হিসেবে তুলে ধরতে পারবে। অতএব, এই সরকারকে সার্বিকভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে হবে। পাশাপাশি সাংবিধানীক ও রাজনৈতিক সংস্কার গুলো সুসম্পন্ন করার জন্য এই সরকারকে যথেষ্ট সময়ও দিতে হবে।