বৃহস্পতিবার দুপুর ১২:২১, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী

ছাত্র-‌শিক্ষক সম্প‌র্কের টানাপো‌ড়েন

১৫৯ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

সভ‌্য সম‌া‌জের প্রধানতম বৈ‌শিষ্ট‌্য হ‌লো জ্ঞানচর্চা আর এই জ্ঞানচর্চার সা‌থে ছাত্র-‌শিক্ষ‌কের সম্পর্ক অ‌বি‌চ্ছেদ‌্য ও অ‌প‌রিহার্য। সমাজ সভ‌্যতার প্রার‌ম্ভিক সম‌য়  থে‌কে জ্ঞানচর্চার‌ বিশ‌াল জগ‌তে  গুরু-‌শি‌ষ্যের ম‌ধ্যে সেই মধুর সম্পর্কের সূত্রপাত হয়েছে।  বিদ‌্যা দান ও বিদ‌্যা গ্রহ‌ণের মধ‌্য দি‌য়ে গ‌ড়ে ও‌ঠে ছাত্র-‌শিক্ষকের এই নি‌বিড়তম সম্পর্ক।  শিক্ষক শিক্ষর্থীদের চেতনায় যে জ্ঞানপ্রদীপ জ্বা‌লি‌য়ে দেন তারই আলো‌তে শিক্ষার্থীরা খুঁ‌জে পায় জীব‌নের প্রত‌্যা‌শিত গন্তব‌্য।

শিক্ষ‌কের অকৃ‌ত্রিম ভা‌লোব‌াসা, নি‌বিড় প‌রিচর্যা আর শিক্ষার্থীর অপ‌রিসীম শ্রদ্ধা, ম‌নো‌যোগ ও নিষ্ঠায় এই প‌বিত্র সম্পর্ক অপার বন্ধ‌নে ও অনা‌বিল সৌন্দ‌র্যে বিক‌শিত হ‌য়ে থা‌কে।  পিতা-মাতার ঔরস‌্যজাত সন্তান‌টিকে মানু‌ষের ম‌তো মানুষ হি‌সে‌বে গ‌ড়ে তুল‌তে শিক্ষক প্রতি‌টি শিক্ষর্থীর ক্ষে‌ত্রেই দ্বিতীয় জন্মদাতার ভূ‌মিকায় অবতীর্ণ হন।
বস্তুত, জ্ঞা‌নের জগ‌তের স‌ঙ্গে শিক্ষার্থী‌কে প‌রি‌চিত করান তার শিক্ষক। শিক্ষা জীব‌নের পর‌তে পর‌তে শিক্ষার্থী‌কে জীবন ও জগ‌তের গভীরতম জ্ঞা‌নের উপল‌দ্ধি ও অনুভব‌কে আবিস্কার করা‌তে থা‌কে শিক্ষক।  এক সময় ছাত্রদের একা‌ডে‌মিক লেখাপড়া শেষ হ‌য়ে যায়, তখন ছাত্ররা সাংসারিক  ও কর্মজীব‌নে প্রবেশ ক‌রে। দেশ-কাল ও প‌রি‌স্থি‌তি ভে‌দে এর কো‌নো ব‌্যতিক্রম দেখা যায় না কখ‌নো।
কিন্তু  প‌রিতা‌পের বিষয়, আমা‌দের দে‌শে ইদা‌নিং  সামা‌জিক-রাজ‌নৈ‌তিক-সাংস্কৃ‌তিক অ‌স্থিরতা ও নৈরা‌জ্যের প্রেক্ষি‌তে  গুরু-‌শি‌ষ্যের সেই মধুরতম সম্প‌র্কের ম‌ধ্যে টানা‌পো‌ড়েন শুরু হ‌য়ে‌ছে।  পরস্প‌রের প্রতি এই অকৃ‌তিম ভা‌লোবাসা ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক দিন দিনই হ্রাস পা‌চ্ছে।  পরস্প‌রের মা‌ঝে হিংসা-লালসা-অ‌বিশ্বা‌সের জন্ম  নি‌চ্ছে।  বিগত ক‌য়েক বছর যাবত ন‌ানা ছু‌তোয় বিদ‌্যার্থী‌দের দ্বারা শিক্ষাদাতারা অপমান-অবদস্ত ও নির্যাত‌নের শিকার হ‌চ্ছেন।  ত‌বে গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হা‌সিনা সরক‌া‌রের  পত‌নের পর থে‌কে শিক্ষক হেনস্তার এই মাত্রা জ‌্যা‌মি‌তিক হা‌রে বে‌ড়েই চল‌ছে। এটা অবশ‌্য  আমা‌দের দে‌শের জন‌্য মো‌টেই শুভকর নয়।
উল্লেখ‌্য, বিগত  ২৪/০৪/২০১৬ তা‌রি‌খে বা‌গেরহা‌টের চিলমারী হিজলা মাধ‌্যমিক বিদ‌্যাল‌য়ের বিজ্ঞা‌নের শিক্ষক অ‌শোক কুমার ঘোষা‌লের বিরু‌দ্ধে  কিছু শিক্ষার্থী  ধর্ম অবমাননার অ‌ভি‌যোগ তো‌লেন স্কু‌লের প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণপদ মহলীর কা‌ছে। ত‌বে সব কিছু যাচাই ক‌রে প্রধান শিক্ষক বিজ্ঞান শিক্ষ‌কের পক্ষ নেন। কিন্তু এতে ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হ‌য়ে স্কুল থে‌কে বের হ‌য়ে বিষয়‌টি তা‌দের অ‌ভিভাবক‌দের জানায়। অতঃপর অ‌ভিভাবকরা প‌রের দিন স্কুল আক্রমন ক‌রেন এবং একপর্যা‌য়ে দুই শিক্ষক‌কে লাইব্রেরিক‌ক্ষে আট‌কে  রা‌খে। প‌রে উপ‌জেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার পার‌ভেজ তাৎক্ষ‌ণিকভা‌বে তা‌দের ছয় মা‌সের কারাদন্ড দেন।
বিগত ২০/০৩/২০২২ তা‌রিখে মু‌ন্সিগঞ্জ সদর উপ‌জেলার বি‌নোদপুর  রাম কুমার উচ্চ‌বিদ‌্যাল‌য়ের বিজ্ঞান ও গ‌ণি‌তের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র ম‌ন্ডের বিরু‌দ্ধে শ্রেণিক‌ক্ষে ধর্ম অবমাননার অ‌ভি‌যোগ আনা হয়। এই নিয়ে ছাত্রদের সা‌থে তার ঝগড়া-ঝা‌ঁ‌টি হয়। এমন উত্তপ্ত পরিস্থি‌তিতে  গ্রেপ্তার  করা হয় তা‌কে। তারপর প্রায় ১৯ দিন কারা‌ভো‌গের পর জা‌মিন পান তি‌নি।
চ‌লিত বছ‌রের ২১ আগস্ট দুপুর দি‌কে নীলফামারী সদর উপ‌জেলার চাপড়াসরমজা‌নি ইউনিয়‌নের বাবড়ী দ্বি-মু্খী উচ্চাবিদ‌্যাল‌য়ের  প্রধান শিক্ষকের রু‌মে এক‌টি স্বার্থা‌ন্বেষী মহল  ও ক‌তিপয় ছাত্র অস্ত্র হা‌তে নি‌য়ে প্রবেশ ক‌রে। এরপর তারা অ‌ফি‌সের আসবাবপত্র ভাংচুর  ও শারী‌রিক-মান‌সিক নির্যাতন ক‌রে প্রধান শিক্ষক জ‌হির উদ্দী‌নের কাছ থে‌কে জোরপূর্বক পদত‌্যাগ প‌ত্রে স্বাক্ষর নেয়।
চ‌লিত বছ‌রের ৩ সে‌প্টেম্বর  সকাল দি‌কে ঢাকার মিরপু‌রের সরক‌ারি  হো‌মিওপ‌্যা‌থিক মে‌ডি‌কেল ক‌লে‌জের প্রভাষক ডা. অসীম দত্ত তৃতীয় ব‌র্ষের ক্লাস নি‌চ্ছি‌লেন। সে সময় তারই সা‌বেক ছাত্রদের নেতৃ‌ত্বে ২০-২৫ জ‌নের এক‌টি দল ক্লা‌সে ঢুকে। তা‌কে বলা হয়, তিনি ছাত্রলী‌গের কর্মী ছি‌লেন। সরকার  পত‌নের আগে শেখ হা‌সিনাকে সমর্থন দি‌য়ে‌ছেন। তাই তার চাক‌রি করার অ‌ধিকার নেই, নৈ‌তিকতাও নেই।  অতঃপর তা‌কে আড়াই ঘণ্টার ম‌তো  ঘি‌রে ধ‌রে আট‌কে রাখা হয়, অকথ‌্য ভাষায় গালাগাল করা হয় এবং অব‌শে‌ষে তা‌কে পদত‌্যাগ প‌ত্রে স্বাক্ষর কর‌তে বাধ‌্য করা হয়।
চ‌লিত বছ‌রের ১০ সে‌প্টেম্বর দুপুর দি‌কে নওগা জেলার রে‌ড়িতলা একা‌ডে‌মির প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীন ও তার স্বামী আশরাফুল হক‌কে এক‌টি ক্লাসরু‌মে বে‌ধে রে‌খে একজন সহকারী শিক্ষ‌কের নেতৃ‌ত্বে ক‌তিপয় শিক্ষার্থী  পদত‌্যা‌গের জন‌্য নির্যাতন কর‌তে থা‌কে। নির্যাত‌নের কার‌ণে তা‌দের দুজ‌নের শরী‌রের বি‌ভিন্ন জায়গা বেশ জখম হয়। এমন অবস্থায় খবর পে‌য়ে সন্ধ‌্যার দি‌কে পু‌লিশ ও সেনাবা‌হিনীর এক‌টি দল স্বামীসহ প্রধান শিক্ষক‌কে উদ্ধার করে।
এইভা‌বে প‌তিত আওয়ামী লীগ সরকা‌রের সহ‌যোগী, সমর্থক, সু‌বিধা‌ভোগী ইত‌্যা‌দি তকমা দি‌য়ে বেঁ‌ছে বেঁ‌ছে দে‌শের স্কুল-ক‌লেজ-‌বিশ্ব‌বিদ‌্যালয় থে‌কে প্রধান শিক্ষক, অধ‌্যক্ষ, উপাচার্য, প্রক্টর, কোষাধ‌্যক্ষ ও ‌সি‌নিয়র শিক্ষক‌দের‌কে শারী‌রিক-মানসিক নির্যাতন ক‌রে পদত‌্যা‌গে  ব‌াধ‌্যকরা হ‌চ্ছে। কিন্তু পদত‌্যা‌গের পর দীর্ঘ দিন যাবত উক্ত প্রতিষ্ঠানগু‌লোর শূন‌্য প‌দে নতুনভা‌বে কো‌নো শিক্ষক ও প্রশাসক যোগদান কর‌ছে না। একার‌ণে  অ‌নেক শিক্ষপ্রতিষ্ঠান এখ‌নো বন্ধ র‌য়ে‌ছে। এতে  দে‌শের  স্বাভা‌বিক  শিক্ষাকার্যক্রম  ব‌্যাহত হ‌চ্ছে।
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক‌দের এভা‌বে হেনস্তা ও নির্যান্ত করা বাংলা‌দে‌শের  ইতিহা‌সে পূ‌র্বে  কখ‌নো দেখা য‌ায়‌নি। শিক্ষার্থী‌দের এধর‌নের প্রবণতা এক‌টি জা‌তির জন‌্য মো‌টেই মঙ্গলজনক নয়। এভা‌বে শিক্ষক‌দের হেনস্তা ও নির্যাতন না করার জন‌্য বিদ‌্যার্থী‌দের‌কে শিক্ষা উপ‌দেষ্টা অধ‌্যাপক ওয়া‌হিদ উদ্দীন মাহমুদ ও  বি‌ভিন্ন বিশ্ব‌বিদ‌্যালয়  শিক্ষক‌দের নি‌য়ে গ‌ঠিত সংগঠন বিশ্ববিদ‌্যালয় শিক্ষক নেটওর্য়াক একা‌ধিকবার আহ্বান জানি‌য়ে‌ছেন। কিন্তু কে শো‌নে কার কথা। শিক্ষক নির্যাত‌নের ধারাবা‌হিকতা  এখ‌নো অব‌্যাহত আছে!!
এ কথা সত‌্য যে আমা‌দের এই অবক্ষয়গ্রস্ত সমা‌জে শিক্ষ‌কেরা ধোয়া তুলসী  পাতা নন। বিগত  স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকা‌রের সময়  অ‌নেক শিক্ষকই নির্লজ্জভা‌বে  সরকা‌রের চাটুকারীতা ক‌রে‌ছেন। কেউ কেউ অন‌্যায়, দুর্নী‌তিসহ নানা অপক‌র্মের সা‌থে জ‌ড়িত ছি‌লেন। কিছু কিছু শিক্ষক  যৌন কে‌লেঙ্কা‌রি,  ভ‌র্তি ও  নি‌য়োগ বা‌ণিজ্যের স‌ঙ্গে সরাস‌রি জ‌ড়িত ছি‌লেন। এই সব শিক্ষক‌দের বিরু‌দ্ধে নিয়মতা‌ন্ত্রিক ব‌্যবস্থা গ্রহণ  কর‌লে আপ‌ত্তির কিছু নেই। তথ‌্যপ্রমাণ সা‌পে‌ক্ষে তাঁ‌দের বিরু‌দ্ধে ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা যে‌তেই পা‌রে।  দলবাজ ও চর‌ত্রিহীন  শিক্ষক‌দের এটাও বু‌ঝিয়ে দেওয়া দরক‌ার যে শিক্ষকতার ম‌তো মহৎ পেশার সা‌থে দলবা‌জি ব‌া যৌনতা শোভনীয় নয়।  ম‌ানুষ গড়ার কা‌রিগর শিক্ষক‌দের প্রধান কাজ হ‌লো শিক্ষা দান। পাশাপা‌শি শিক্ষা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা‌নের কল‌্যাণ ও উন্নয়নও তা‌দের অন‌্যতম দা‌য়িত্ব। এখা‌নে  রাজনী‌তির কো‌নো স্থান নেই। ত‌বে কেউ য‌দি রাজনী‌তি কর‌তে চান, তাহ‌লে তার উচিত শিক্ষকতার পেশা পুরোপু‌রি ত‌্যা‌গ করা।
অ‌নেক শিক্ষক‌দের বিরু‌দ্ধে গুরুতর অ‌ভি‌যোগ র‌য়ে‌ছে-তাঁরা ক্লা‌সে ঠিকম‌তো পড়ান না। তাঁরা টিউশ‌নি আর কো‌চিং সেন্টা‌রে বে‌শি সময় দেন। ক্লা‌সে নিয়‌মিত আসেন না। যেসব বিদ‌্যার্থী তাঁ‌দের কা‌ছে প্রাইভেট প‌ড়ে না ব‌া তাঁর কো‌চিং সেন্টা‌রে যায় না, তা‌দের‌কে কম নম্বর দেওয়া হয়। ছাত্রদের‌কে দি‌য়ে ব‌্যক্তিগত কাজও করা‌নো হয়। এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রী‌দের‌কে নানাভা‌বে হয়রা‌নি করা হয়। এসব কার‌ণে  শিক্ষার্থীরা  এধর‌নের জঘন‌্য  শিক্ষক‌দের প্রতি সব সময়ই ক্ষুব্ধ থা‌কেন। ত‌বে এক্ষে‌ত্রে সু‌যোগ বু‌ঝে রাগ মিটা‌নোর জন‌্য কখ‌নো আইন নি‌জের হা‌তে তুলা ঠিক নয়। এসব ব‌্যাপা‌রে সু‌নি‌দির্ষ্ট অ‌ভি‌যো‌গের ভি‌ত্তি‌তে  শিক্ষক‌দের যে‌কো‌নো অ‌নৈ‌তিক কর্মকান্ড রো‌ধে প্রা‌তিষ্ঠা‌নিক বি‌ধিব‌্যবস্থা গ্রহণ করা যে‌তে পা‌রে।
কিন্তু নিয়মতা‌ন্ত্রিক পদ্ধ‌তি অবলম্বন না ক‌রে ঢালাওভা‌বে শিক্ষক‌দের পদত‌্যা‌গে বাধ‌্য করা, অপমান-অপদস্ত করা কো‌নোম‌তেই সমর্থন‌যোগ‌্য নয়। বর্তমা‌নে বি‌ভিন্ন রাজ‌নৈ‌তিক দ‌লের উগ্র সমর্থ‌কেরা ধ‌রে নি‌য়ে‌ছেন যে, প‌তিত স্বৈরাচারী সরকা‌রের সমর্থক‌দের ওপর যে‌কো‌নো অন‌্যায়-অ‌বিচার-অত‌্যাচার কর‌লে সেটা অপরাধ হি‌সে‌বে গন‌্য হ‌বে না।  আর  এই ভ্রান্ত ধারণার কার‌ণে নিরীহ‌  শিক্ষকরাই আক্রম‌নের  লক্ষবস্তু‌তে প‌রিণত হ‌চ্ছেন।
শিক্ষার্থী‌দের এহেন আচর‌ণে ম‌নে হ‌চ্ছে, যেন রাষ্ট্রের সব দুর্নী‌তি-স্বজন‌প্রী‌তি শিক্ষ‌কেরাই ক‌রে থা‌কেন।  রাষ্ট্রয‌ন্ত্রের অন‌্যরা ধোয়া তুলসী পাতা। অথচ, প‌তিত সরক‌া‌রের যাবতীয় অ‌নিয়ম-অপকর্ম-অনাচা‌রের সব‌চে‌য়ে বড়  সহ‌যোগী ছি‌লেন দে‌শের আমলারা। তাঁরা কো‌নো রকম রাখঢাক ছাড়া একেবা‌রে দলীয় কর্মীর চে‌য়ে অধিক দলবাজ হ‌য়ে সরকার‌কে টি‌কি‌য়ে রাখ‌তে সাহায‌্য ক‌রে‌ছেন।  নির্বাচনব‌্যবস্থা ধ্বংস ক‌রে‌ছেন। জনগ‌ণের ম‌্যা‌ন্ডেট না-থাকা সরকা‌রের দুর্বলতার সু‌যো‌গ নি‌য়ে নি‌জেরাই হ‌য়ে উঠে‌ছি‌লেন  মহাক্ষমতাব‌ান। কো‌টি কো‌টি টাক‌ার দুর্নী‌তি ক‌রে‌ছেন। ক্ষমতার অপব‌্যবহার ক‌রে‌ছেন। কিন্তু তাঁ‌দের দি‌কে কেউ আঙ্গুল তুল‌ছে না। স‌চিবাল‌য়ে গি‌য়ে কো‌নো কর্মকর্তাকে এখ‌নো পর্যন্ত ‌কেউ শাসায়নি। কেউ কখ‌নো ব‌লে‌নি, এক্ষু‌নি পদত‌্যাগ করুন।
এখন প্রসঙ্গক্রমে প্রশ্ন আসে-‌শিক্ষক‌দের প্রতি এত ক্ষোভ কেন? কেন তাঁ‌দের জোর ক‌রে পদত‌্যাগ করা‌নো হ‌চ্ছে? তাঁরা দুর্বল ব‌লে? দে‌শের শিক্ষাব‌্যবস্থা‌কে ধ্বংস করার জন‌্য? একজন শিক্ষক হি‌সে‌বে যা‌দের দা‌য়িত্ব সমাজ‌কে আলো‌কিত করা, তাঁরা য‌দি এমন ভয়াবহ নিপীড়ন ও হেনস্তার  শিকার হন, তাহ‌লে আমা‌দের সমা‌জের ভ‌বিষ‌্যৎ কী হ‌বে? মূলত  কিছু দুস্কৃ‌তিকারী-সু‌বিধাবাদীরা নি‌জে‌দের  হীনস্বার্থ  হা‌সি‌লের জন‌্য শিক্ষার্থী‌দের নিস্পাপ ও কোমল আবেগ‌কে ব‌্যবহার ক‌রছে। তা‌দের কার‌ণেই দে‌শের এই ক্রা‌ন্তিকা‌লে ছাত্র-‌শিক্ষ‌কের মধুর সম্পর্ক নষ্ট হ‌চ্ছে।
সুতরাং শিক্ষক‌দের হেনস্তা ও নির্যাতন ব‌ন্ধের জন‌্য দ্রুত পদ‌ক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। যে শিক্ষ‌কেরা লা‌ঞ্ছিত ও অপমানিত হ‌য়ে‌ছেন, তাঁ‌দের প‌ক্ষে ক্লাসরু‌মে ফি‌রে গি‌য়ে শিক্ষার্থী‌দের পাঠদান করা খুবই ক‌ঠিন। এমতাবস্থ‌ায় প্রশ‌াসন-‌শিক্ষক-‌অ‌ভিভাবক-‌শিক্ষার্থী–সবাই মি‌লে চেষ্টা কর‌লে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা‌নের সুষ্ঠু ও সুন্দর প‌রি‌বেশ ফি‌রি‌য়ে আনা সম্ভব। প্রথ‌মেই জোর ক‌রে পদত‌্যাগ করা‌নো শিক্ষক‌দের ফি‌রিয়ে আনার উদ্যোগ নি‌তে হ‌বে। কেননা, তা‌দের ম‌ধ্যে অ‌নে‌কেই সৎ ও নিষ্ঠাবান আছেন। আর যারা ব‌াস্ত‌বেই দোষী ও চ‌রিত্রহীন, তাঁ‌দের বিরু‌দ্ধে প্রা‌তিষ্ঠা‌নিক ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা যে‌তে পা‌রে।
বস্তুত, শিক্ষকরা হ‌লেন আলোর প‌থের দিশারী। অন্ধকারাছন্ন ঘনকা‌লো রা‌ত্রিতে ধ্রুবতারা‌ যেমন পথচারী‌কে প‌থের সন্ধান দেয়, তেমনি অজ্ঞতার গহী‌ন অন্ধকা‌রে একজন শিক্ষক জ্ঞা‌নের মশাল  জ্বা‌লি‌য়ে সমা‌জের সমূহ অন্ধকার-অনাচার দূর ক‌রেন। অতএব, ছাত্র-‌শিক্ষ‌কের ম‌ধ্যে মধুর সম্পর্ক না থাক‌লে জ্ঞা‌নের রা‌জ্যের সম্প্রস‌ারণ ঘট‌বে না, মানুষ অজ্ঞতার অন্ধক‌া‌রে থে‌কে যা‌বে। তাই প্রাচীনকাল থে‌কেই গুরু-‌শি‌ষ্যের ম‌ধ্যে এক‌টি মধুর সম্পর্ক  গ‌ড়ে ও‌ঠে‌ছে। শত বাধা-‌বিপ‌ত্তির ম‌ধ্যেও আমা‌দের‌কে  সেই মধুর সম্পর্ক  অটুট রাখ‌তে হ‌বে।
সুতরাং বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষি‌তে আমা‌দের দে‌শে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগু‌লো‌তে সৎ-চ‌রিত্রবান-‌নিষ্ঠাবান-‌নি‌র্লোভ-‌মেধাবী ও যোগ‌্য ব‌্যক্তি‌দের‌কে শিক্ষক হি‌সে‌বে নি‌য়োগ দি‌য়ে রাজনীতিমুক্ত  শিক্ষাব‌ন্ধব প‌রি‌বেশ সৃ‌ষ্টি কর‌তে হ‌বে। পাশাপাশি শিক্ষক‌দের বেতন-ভাতা-দক্ষতা ও অন‌্যান‌্য সু‌যোগ-সু‌বিধা বৃ‌দ্ধির‌ বিষয়‌টির প্রতিও য‌থেষ্ট খেয়াল রাখ‌তে হ‌বে। আর এমন‌টি হ‌লে ছাত্র-‌শিক্ষ‌কের যৌথ আয়োজ‌নে আম‌দের প্রতি‌টি শিক্ষাঙ্গন স‌ত্যিকা‌রের জ্ঞানচর্চার পাদপী‌ঠ হি‌সে‌বে প্রতি‌ষ্ঠিত হ‌বে।
খায়রুল আকরাম খান
ব‌্যু‌রো চীফ : deshdorshon.com

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

মব জা‌স্টিস : প্রেক্ষিত বাংলা‌দেশ

সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী…

১৬ বছরের অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই…