খেলা কোনো অর্থবহ কাজ নয়। খেলা সমাজ-রাষ্ট্রে ও বিশ্বে মানুষের মৌলিক চাহিদার কিছু উৎপাদন করে না। তবে মৌলিক উৎপাদনশীলতার মেহনতে জড়িত রক্ত-পরিশ্রমের অর্থ খেলায় প্রচুর পরিমাণে খরচ হয়, যা বিশ্বব্যাপী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চরমভাবে স্বার্থবিরোধী। খেলা বিশ্বব্যাপী একক মানবসমাজকে বিভিন্ন দলে শত্রুজ্ঞানে ভাগ করে জয়ের মিথ্যা উল্লাসে মেতে উঠে। অপরকিছু দল পরাজয়ের গ্লানিতে ডুবে যায়। যা প্রকৃত মানবজীবনের সন্ধান থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
আদিকাল থেকেই বিশ্বব্যাপী একটি একক মানবসমাজ সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছে। বিশ্বের একপ্রান্তের মানুষ আরেক প্রান্তের মানুষের ভাই। আমরা সবাই একই পিতামাতার সন্তান। আমাদের সবার রক্তের রঙ, শরীরের মৌলিক কাঠামো, মৌলিক চাহিদা, আশা-আকাঙ্ক্ষা এক। উপরের ছাদ এক। নীচের বিছানা এক। খেলার মতো একটা খুবই সাধারণ ও অর্থহীন কাজ-পেশা দিয়ে সমাজের বিভিন্ন অংশকে তথাকথিত জয়-পরাজয়ের স্বাদ দেওয়া, শত্রুজ্ঞান করা, ব্যস্ত রাখা, জাতীয় অর্থ অপচয় করা মানবতাবিরোধী।
খেলায় প্রতিনিধিত্ব করতে সত্যচিন্তা, শিক্ষা, সততা, জ্ঞান ও সচ্চরিত্র কোনো শর্ত নয়। খেলায় একজন গণ্ডমূর্খ, একজন ভণ্ড-লম্পট, অশিক্ষিত-নির্লজ্জও দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারে। এতে সততা, জ্ঞান, শিক্ষা অনুৎসাহিত হয়। দেশ ও বিশ্ব ধীরে ধীরে অসংখ্য মীমাংসাহীন সমস্যায় প্রবেশ করে। মানবের শ্রেষ্ঠত্ব, জীবনের গূড় অর্থ, তাৎপর্য ধূলোয় মিশে যায়। তাই খেলা জাতীয়ভাবে ও বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত হতে পারে না।
“খেলার মতো একটা খুবই সাধারণ ও অর্থহীন কাজ-পেশা দিয়ে সমাজের বিভিন্ন অংশকে তথাকথিত জয়-পরাজয়ের স্বাদ দেওয়া, শত্রুজ্ঞান করা, ব্যস্ত রাখা, জাতীয় অর্থ অপচয় করা মানবতাবিরোধী।”
খেলা বিশ্বের সমস্যা সমাধান করবে দূরের কথা, কোনো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা দূর করারই সাধ্য নেই। আজ যখন শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া, তখন তারা এশিয়া কাপ নেয়। পাকিস্তান যখন বন্যার পানিতে ডুবে মরছে, বিশ্বের দরবারে ভিক্ষার থালা হাতে, তখন তারা ফাইনাল খেলতে পেরে গর্ববোধ করে, মাঠে সেজদা দেয়। খোলামাঠে হাগু করা ভারতও বড় বড় কাপ নেয়। আর বাংলাদেশের কথা নাইবা বললাম।
সুতরাং খেলায় হার-জিত নিয়ে উল্লাসে ফেঁটে পড়া বা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার কোনো কারণ দেখছি না। সাধারণ একটা বিষয়কে সাধারণ হিসেবেই দেখতে হবে, বিশেষ নয়। মানুষ হিসেবে, জাতি হিসেবে, ব্যক্তি হিসেবে আমাদের অনেক কাজ বাকি। খেলার সময় কই? হ্যাঁ, স্বাস্থ সুস্থ রাখতে নিয়মিত ও পরিমিত শরীরচর্চা করুন।
লেখক: জাকির মাহদিন
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized