একসময় প্রযুক্তি এতটা অগ্রসর ছিল না। চিঠিপত্র পাঠাতে, টাকা পাঠাতে, কারও সাথে ভয়েস কলে কথা বলতে আমাদের আলাদা আলাদা যন্ত্র ব্যবহার করতে হতো। তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের ফলে সবকিছু আজ একটি মাত্র যন্ত্র কম্পিউটার বা একটি এন্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহার করে সম্ভবপর করা হয়েছে। বর্তমানে আমরা ঘরে বসেই যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পাদন করতে পারি।
নারীরা পুরুষের পাশাপাশি সকল উন্নত দেশে প্রায় ৫০% থেকে ৮০% পর্যন্ত জাতীয় আয়ে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ধর্মীয় গোড়ামী ও কুসংস্কার নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে পিছপা করে রেখেছে। বাংলাদেশের প্রাচীন সংস্কৃতি হস্তশিল্প নির্ভর ছিল। আর এখানকার প্রায় ৯০% হস্তশিল্প নারী নির্ভর ছিল একসময়। কামার, কুমোর, বাঁশ শিল্প, তাঁত শিল্প, সুবিখ্যাত মসলিনসহ যাবতীয় প্রাচীন বাংলার সংস্কৃতি নারীনির্ভর ছিল বিষয়টি আমাদের অজানা নয়।
বাংলাদেশের সর্বশেষ আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যার ঘনত্বের দিক দিয়ে আমরা সবার শীর্ষে। প্রায় ১১২৫ জন প্রতি বর্গকিলোমিটারে। এই বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর আর্থিক উন্নতির জন্য নারী পুরুষ নির্বিশেষে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়ানো বাধ্যতামূলক বিবেচিত হচ্ছে। এই বিপুল সংখ্যক নারী সমাজকে বেকার রেখে এদেশের অর্থনেতিক মুক্তি সম্ভব নয়। অন্যদিকে ধর্মীয় নীতি নৈতিকতা উপেক্ষা করে এই বিপুল সংখ্যক নারী সমাজকে ঘর থেকে বাহিরে এনে কাজ করানো ও সম্ভব নয়। তাই পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের এই নারী সমাজকে ঘরে বসিয়ে রেখেই নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়ানো সম্ভব। যা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের ব্যাপক সমৃদ্ধি ও ব্যবহার যোগ্যতার মধ্য দিয়ে।
নারীরা স্বাভাবিক ভাবেই ঘরমুখী। আমাদের দেশের প্রায় মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪২ শতাংশ মোবাইল ব্যবহার করে১। নারীরা ও মোবাইল ব্যবহার করে। শুধুমাত্র ইউটিউবে ভিডিও দেখে সময় পার করা নারীর সংখ্যাও আমাদের দেশে কম নয়। এক শ্রেণির মানুষের উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে নিজের উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবেও এই মোবাইল ফোনকে ব্যবহার করা যায় এখন। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর মাধ্যমে একজন নারী ইচ্ছে করলেই নিজের ডিজাইন করা একটা ড্রেস, বাড়ীতে বানানো একটা প্রোডাক্ট এসব সাইটগুলো ব্যবহার করে খুব সহজেই বাজারজাত করে মানুষের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছে।
নারীরা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট বিষয়ে নানাবিধ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আজ স্বাবলম্বী সারা পৃথিবীতে। সারা পৃথিবীর আইটি সেক্টর বর্তমানে বেশ উন্নত। সেখানে নারীরাও পিছিয়ে নেই। কম্পিউটারের সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে আমাদের দেশের নারী সমাজ অর্থনৈতিক মুক্তি অন্বেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হবে। একথা স্পষ্টভাবেই বলা যায় সঠিক ও সহজবোধ্য তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও তা ব্যবহার করে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত নারীরা আগামীর পৃথিবীতে নেতৃত্বের পাশাপাশি আমাদের দেশে একটি শক্তিশালী ও প্রশিক্ষিত জনসম্পদে পরিণত হওয়া এখন সময়ের ব্যপার মাত্র।
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized