রাজনীতি হল এক ধরনের কর্মতৎপরতা। এই তৎপরতা সকল সমাজেই সর্বজনীন। অতীত, বর্তমান, এমনকি ভবিষ্যৎ-সর্বকালে ও সর্বপর্যায়ে রাজনীতিক কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়। বস্তুত রাজনৈতিক সহনশীলতা, পারস্পরিক সম্মান-শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সহিষ্ণুতা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট। এসব আচরণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অগ্রগতির পূর্বশর্তও বটে।
অবাক হওয়ার বিষয়, বর্তমানে আমাদের দেশে রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। এখানে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন ব্যবসায়ী ও টাকাওয়ালারা। প্রতিষ্ঠিত ও ত্যাগী রাজনীতিবিদরা এই টাকাওয়ালাদের হাতে জিম্মি। তাই তো বর্তমানে জাতির এতো দুর্ভোগ।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, কালের পরিক্রমায় বর্তমানে দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক বক্তব্যের ভাষারও পরির্বতন ঘটেছে। আগে রাজনৈতিক নেতাদের মুখের ভাষা ছিল নম্র, ভদ্র ও পরিশীলিত। আঘাত দিয়ে কথা না বলে যুক্তি দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা ছিল তখন। রাজনীতিবিদ হিসাবে পরস্পরের মনোভাব ছিল সহমর্মিতার। বর্তমানে রাজনীতির মাঠ থেকে সে নম্রতা ও ভদ্রতা উধাও হয়ে গেছে। বিগত প্রায় দুইযুগ ধরে রাজনীতির `ভদ্র-জ্ঞান` ব্যাপক হারে লোপ পেয়েছে। এখন অনেককেই `হেয়-প্রতিপন্ন` করে, তুচ্ছতাচ্ছিল্যভাবে কথা বলে তৃপ্ত হয়।
দেশের রাজনীতি অনেক আগ থেকেই পরস্পরবিরোধী দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে আছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে; খেলা হওয়ার, দেশ থেকে বিতাড়িত করার, ক্ষমতা থেকে নামিয়ে ফেলার, রাস্তায় নামতে না দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছে। রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হচ্ছে, হুমকি-ধমকি দেওয়ার মাধ্যমে ডিসেম্বরে উভয় পক্ষই একে অপরকে দেখে নেওয়ার কথা প্রাতদিন শোনাচ্ছে। আমাদের দেশে নিকট অতীতে পরস্পরবিরোধী এ দুই শক্তি রাস্তায় নেমে পোড়াপুড়ি করেছে, মানুষ হত্যা করেছে, অর্থনীতি অচল করেছে, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের শেষ দিকে কিংবা ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই দিন রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন ও খুশীর দিন। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ উক্ত দিনটি নিয়ে খুব শঙ্কিত। পূর্বের সেই অভিজ্ঞতাথেকেই মানুষ একধরনের আতঙ্কবোধ করছে যে এই চরম অর্থনৈতিক সংকটকালে রাজনীতি যদি আবার আগের মত হিংস্র হয়ে ওঠে, তাহলে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার সুযোগ বোধ হয় একেবারেই থাকবে না। পাল্টাপাল্টি এই রাজনীতির কোনো অর্থই মানুষ খুঁজে পায় না। কারণ আমাদের রাজনীতিবিদেরা রাজনীতিকে অনেক আগেই যে জায়গায় নিয়ে গেছেন, সেখানে আদর্শের চর্চার চাইতে শক্তি, ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের প্রভাব বিস্তারের দৃশ্যমান চরিত্র অনেক বেশি লক্ষ করে আসছেন।
এক দল অন্য দলের বিরুদ্ধে লুটপাট, দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ যেসব অভিযোগ করছে তা নতুন নয়, খুব বেশি মিথ্যাও নয়। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার নজির কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। সুতরাং যখন খেলা বলে হুমকি দেওয়া হয়, তখন প্রতিপক্ষও খেলার জবাব খেলার মাধ্যমেই দেওয়ার হুমকি দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, রাজনীতিকে এভাবে হুমকি-ধমকি ও খেলার ময়দানে পরিণত করার বিষয়টি তারদেরই দীর্ঘ দিনের অর্জন!!
অতএব অর্থনৈতিক সংকটের সময় দেশের রাজনীতিতে যদি সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে পরিস্থিতি কতটা নাজুক হতে পারে তা যদি সরকারি ও বিরোধী দলসহ অন্যান্য গোষ্ঠীরা উপলদ্ধি করতে না পারে, তাহলে জনজীবন নৈরাজ্য ও অসহায়ত্ব কতটা ছড়িয়ে পড়তে পারে তা এদেশের সাধারণ জনগণকে এখন থেকেই ভাবিয়ে তুলছে।
এমনি অবস্থার প্রেক্ষিতে রাজনীতিবিদদের এখন সবার ওপারে দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের সমাধানও করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে; যদিও আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব আলোচনাকে এড়িয়ে চলতেই অভ্যস্ত। তাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিপক্ষকে রাজপথে যে মোকাবিলা কিংবা ফয়সালার পরিনাম কখনো মঙ্গলজনক হয় না।
খায়রুল আকরাম খান
ব্যুরো চীফ: দেশ দর্শন
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized