ফুটবল বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় খেলা। এই খেলার প্রতি রয়েছে বাঙালির প্রবল আবেগ ও উন্মাদনা। বিস্ময়করভাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব বাংলার দামাল ছেলেরা “স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল” গঠন করে ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রদশর্নী ফুটবল খেলে বিশ্ব জনমত গঠনে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল। বিশ্বের ইতিহাসের এ ধরনের ঘটনা সত্যিই বিরল!
এই ফুটবল খেলা বাংলাসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে প্রথম চালু করে ইংরেজরা। ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর বাংলায় ব্যাপকভাবে ইংরেজ বণিকদের আগমন ঘটে। ইংরেজ বণিকরা খেলাধুলা বেশ পছন্দ করতো। ইংরেজ বণিকরা তাদের সৈনিকদের সাথে সুশৃঙ্খলভাবে ফুটবল, ক্রিকেট ও হকি খেলতেন। আর তাদের এই প্রচেষ্টাতেই ফুটবল খেলা ভারত উপমহাদেশের ক্রীড়া জগতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮২১ সালে মুম্বাইয়ে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিযোগীতামূলক ফুটবল খেলা শুরু হয়। মুম্বাই মিলিটারী বনাম মুম্বাই আইল্যান্ড দলের মাধ্যমে এই খেলার সূচনা ঘটে। এ জন্য মুম্বাইকে উপমাহদেশের ফুটবলের জন্মভূমি বলা হয়। কিন্তু অনেকের মতে মুম্বাইয়ের আগে এলাহাদ, কলকাতা ও ঢাকায় ফুটবল খেলার প্রচলন শুরু হয়।
তবে ফুটবল তখন ইংরেজ বণীক, আমলা, ইংরেজ সেনাবাহিনী ও আরমের্নীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। কোনো ভারতীয়দের এই খেলায় অংশগ্রহনের সুযোগ ও সামর্থ্য ছিলো না। ১৮৮৪ সালে স্টক নামে এক ইংরেজ শিক্ষকের উদ্যোগে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের বাঙালি ছাত্ররা আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল খেলা শুরু করে। আর ওই বছর থেকেই বাঙালিদের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। আর এ সময় থেকেই বাংলায় নগেন্দ্র প্রসাদ সার্বাধিকারী, বামাচরণ কুন্ড, শিবদাসের মতো কালজয়ী ফুটবলারদের আবির্ভাব ঘটতে থাকে।
এই অবস্থায় বাঙালিদের খেলার সুবিধার্থে কলকাতার অভিজাত শ্রেণিদের পৃষ্ঠপোষকতায় ১৮৮৫ সালে শোভাবাজার ক্লাব, কুমারটুলি ক্লাব ও ন্যাশনালক্লাব, ১৮৮৯ সালে মোহনবাগান ক্লাব, ১৮৯১ সালে মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব গঠিত হয়। কলকাতায় এসব ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর পরই তৎকালীর বাংলার পূর্বাঞ্চলে ফুটবলের ফরোয়ার্ড মার্চ শুরু হয়।
ক্রামন্বয়ে বাংলা সহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ফুটবল জনপ্রিয় খেলায় পরিনত হতে থাকে। এই অবস্থায় ১৮৯৩ সালে গঠিত হয় “ইন্ডিয়ান ফুটবল এসোসিয়েশন” যা আইএফএ নামে পরিচিত। এই এসোসিয়েশন একই বছর শুরু করে “আইএফএ” শিল্ড প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতার উদ্যোক্তা ছিলেন জামার্ন সাহেব স্যার এ এ আপকার, ইংরেজ সাহেব জে সাদারল্যান্ড ও কুচবিহার এবং পাতিয়ালার দুই মহারাজ। ক্রমে ক্রমে এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ঢাকা, কলকাতা, গৌহাটি সহ ভারতে বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠে ছোট-বড় ক্লাব। আর এ সময় ১৮৯৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় ভিক্টোরিয়া স্পোটিং, ওয়ারী ও লক্ষিবাজার ক্লাব। এই ক্লাব তিনটিকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নতুন নতুন ফুটবলার তৈরি হতে থাকে। অল্প দিনের মধ্যেই এই ক্লাবগুলো ঢাকায় বেশ জনপ্রিয় হতে থাকে। আস্তে আস্তে ঢাকায় আরমানী টোলা ক্লাব, ইস্ট এন্ড ক্লাব, তেজগাঁও ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, মনিপুর ফার্ম সহ আরো কিছু দল প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এর ফলে ফুটবলে ঢাকার ছেলেদের নৈপুণ্য ও দক্ষতা বাড়তে থাকে আর এর সাথে বাড়তে থাকে তাদের চাহিদা।
আজ ইউরোপীয় ক্লাবগুলো যেমন ঝুঁকে পড়ছে ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার ফুটবলারদের দিকে, তেমনি ১০, ২০ ও ৩০ দশকে কলকাতার ক্লাবগুলো ঢাকার ফুটবলারদের দলে ভেড়ানো জন্য সব সময় উন্মুখ হয়ে থাকতো। এ সময় ঢাকার উদীয়মান ফুটবলাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন-কানু রায়, যতীন্দ্রনাথ রায়, রাজেন সেন গুপ্ত, নগেন কালী, তেজচন্দ্র সোম, দীনেশ গুহ, ভানু দত্ত রায়, প্রশান্ত পোদ্দার, সিদ্দীক দেওয়ান, সোনা মিয়া, আব্বাস মির্জা, জাদুকর আব্দুস সামাদ প্রমুখ। এরা নিজ ফুটবল গুণে কলকাতার বিখ্যাত ক্লাবগুলোতে নিয়মিতভাবে লেখতেন।
কলকাতায় গিয়ে ঢাকার ছেলেরা যখন একের পর এক চমকপ্রদ নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে থাকে তখন কলকাতায় গড়ে ওঠে ঢাকার ফুটবলের এক বিশাল প্রেমিক গোষ্ঠী। পরে এদেরই উৎসাহে পূর্ববঙ্গের ছেলেদের নিয়ে ১৯২০ সালে কলকাতায় গঠিত হয় ইস্ট বেঙ্গল ক্লাব। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে শুরু হয় ফ্রেন্ডলি ম্যাচ। এক এলাকার দল আরেক এলাকায় গিয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতো। স্থানীয় জমিদার ও অভিজাত শ্রেণির লোকরা এ সব প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো।
সে সময় জেলা পর্যায়ে ফুটবল ছিলো জমজমাট। ময়মনসিংহের “সূর্যকান্ত শিল্ড”, রংপুরের “গোবিন্দলাল শিল্ড”, দিনাজপুরের “নরনারায়ন রামকানাই কুন্ড শিল্ড”-এর প্রতিযোগিতা ছিলো দেশ-বিদেশে বেশ আলোচিত। এ সব প্রতিযোগিতায় ঢাকা ছাড়াও কলকাতার নাম-দামী দল অংশ নিতো। অংশগ্রহনকারী দলগুলোর মধ্যে শিরোপার জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতো।
পূর্ব বাংলার ফুটবলের সার্বিক উন্নতি ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকার নবাবদের
পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৩২ সালে ঢাকায় লিগ ফুটবল শুরু হয়। এই অভিজাত শ্রেণির উদ্যোগেই ১৯৩৩ সালে “ঢাকা স্পোটিং এসোসিয়েশন” অথার্ৎ “ডিএসএ”গঠিত হয়। ঢাকার ফুটবল উন্নয়নে ডিএসএ`র প্রচেষ্টা ছিলো লক্ষ্যনীয়। তাদের আয়োজনে ফুটবল লিগ ও নক আউট টুর্নামেন্ট গুলো অনুষ্ঠিত হতো লক্ষিবাজার, ভিক্টোরিয়া, ওয়ারী ও জগন্নাথ কলেজ মাঠে। সে সময় বাঁশের বেড়া দ্বারা ঘিরে টিকেট দিয়ে খেলা অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৩৬ সালের প্রথম দিকে খাজা মোহাম্মদ ইসমাইল, খাজা মোহাম্মদ আদেল, জমিদার নৃপেন রায় চৌধুরী ও জমিদার সুরেশ চন্দ্রের উদ্যোগে জগন্নাথ কলেজ মাঠে তৈরি হয় ডিএসএ`র প্যাভিলিয়ান। টিনের বেড়া, টিনের চাল ও কাঠের তৈরি আসন বিশিষ্ট ছিল এই প্যাভিলিয়ান। বর্তমান জেনারেল পোস্ট অফিসের পুরো জায়গাটি ছিল জগন্নাথ কলেজের মাঠ। সে সময় এ মাঠে সব সময় আন্তঃস্কুল ও আন্তঃকলেজ ফুটবল অনুষ্ঠিত হতো। ডিএসএ`র এই প্যাভিলিয়ান তৈরির পর পরই ১৯৩৬ সালের শেষের দিকে ঢাকায় মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব ও ১৯৩৭ সালের প্রথম দিকে ঢাকায় ওয়ান্ডর্স ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন এই ক্লাব দুটি প্রতিষ্ঠার পর ঢাকায় ফুটবলের জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ডিএসএ`র প্যাভিলিয়ানে নিয়মিতভাবে ফুটবল লিগ অনুষ্ঠিত হতো। এই প্রতিযোগিতায় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ সহ কলকাতার ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মোহামেডান স্পোটিং এবং ইংল্যান্ডের বিখ্যাত দলগুলো ঢাকার মাঠে ফুটবল খেলতে আসতো। খেলা হতো তীব্র প্রতিযোগিতা পূর্ণ। এসব খেলায় বিপুল দশর্ক এর সমাগম ঘটতো।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। কিন্তু দেশভাগের ফলে ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে একটা বিরাট শূন্যতার তৈরি হয়। তখন বিভিন্ন ক্লাবের হিন্দুপৃষ্ঠপোষক ও সংগঠকরা পূর্ববঙ্গ ছেড়ে ভারতে চলেযান। ফলে ঢাকার ফুটবলে এক বিরাট স্থবিরতা নেমে আসে। কিন্তু এ সমস্যা খুব বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। ভারত থেকে হিজড়ত করে আসা অবাঙালি অভিজাত শ্রেণি, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিরা ক্লাবগুলোর হাল ধরেন। ফলে ঢাকার ফুটবল অল্প দিনের মধ্যেই আগের অবস্থানে চলে আসে। এই অভিজাত শ্রেণি ও ঢাকার নবাবদের প্রচেষ্টাতেই ১৯৫৪ সালের শেষের দিকে ঢাকার গুলিস্তান এলাকায় প্রথম আধুনিক আঙ্গিকে খেলাধুলা জন্য স্টেডিয়াম নির্মিত হয়। এই স্টেডিয়াম তৈরির পর ঢাকার ফুটবলের মান ও প্রসারের ব্যাপক উন্নতি ঘটে।
এ সময় পুরানো ঐতিহ্যবাহী ক্লাবগুলোর পাশাপাশি ঢাকায় বেশকিছু নতুন ফুটবল ক্লাব গড়ে ওঠে। এই ক্লাবগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো-ঢাকেশ্বরী কটন মিলস, ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ব্লু, ইপি জিমখানা, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াপদা, আজাদ স্পোটিং, বিজিপ্রেস, ফরাশগঞ্জ,ওরিয়েন্টাল, রহমতগঞ্জ সহ আরো কিছু ক্লাব।
এ সব ক্লাবে খেলে যারা দেশের ফুটবলকে সমৃদ্ধ করেছেন, তারা হলেন-সাহেব আলী, আশরাফ, কবীর, ভাওয়াল, কালীপদ, রনজীৎ, মমতাজ,শওকত, দেবনাথ, সালাম, জব্বার, আব্বাস, আলাউদ্দীন, শাহ আলম, তোরাব আলী, আলী নেওয়াজ, কালা গফুর, কাদের বক্স, মাওলা বক্স, সফিউল্লাহ, ইউসুফ বক্স, বজলুর রশিদ,আরজু, জলিল আনসারী, আব্দুর রহিম, কায়কোবাদ, খান মজলিস,রুহুল আমিন, মহিউদ্দীন, ফতেহ জং, বাহরাম, ম্যাকওয়া, কুদরতউল্লাহ, শৈলেস, আলতাফ, উপেন সাহা, কামরু সহ আরো অনেকে।
পঞ্চাশ-ষাট ও সত্তর দশকের ফুটবলের এ সব রত্নরা ছিলেন আন্তর্জাতিক মানের ফুটবলার। উঁচুমানের এ সব ফুটবলারদের খেলা দেখতে দর্শকরা ঝড়-বাদল, রোদের তীব্রতা উপেক্ষা মাঠে আসতেন। পঞ্চাশ ও সত্তর দশকে ঢাকা মোহামেডা স্পোটিং ও ঢাকা ওয়ান্ডার্সে ক্লাব ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। ওই তিন দশকে মোহামেডান এবং ওয়ান্ডার্সের খেলা মানে মহারণ! এ দুই ক্লাবের খেলার দিন মাঠে ও পুরান ঢাকায় উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যেত।
পঞ্চাশ ও সত্তর দশকে ঢাকার জনসংখ্যার তুলনায় খেলার মাঠ ছিলো অনেক বেশি। বিশেষ করে রেসর্কোস ময়দান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠ, ধূপখোলা মাঠ, কলাবাগান খেলার মাঠ, আরমানিটোলা মাঠ, শাহজাহানপুর রেলওয়ে মাঠ, বনানী মাঠ, ধানমন্ডী খেলার মাঠ, লালবাগ শ্মশানঘাট খেলার মাঠ, গোলাপবাগ মাঠ, বাসাবো মাঠ, তাজমহল রোড মাঠ, খিলগাও মাঠসহ গোটা ঢাকার একটি বৃহৎ অংশই ছিলো উন্মুক্ত খোলা মাঠ। তাই পাড়া মহল্লায় শিশু-কিশোর ও তরুণরা বিকেল হলেই বল নিয়ে মাঠে নেমে পরতেন। বিকেলে ঢাকার সবগুলো মাঠই হয়ে উঠতো শিশু-কিশোরদের কলরবে উৎসব মুখর। ছিলো না কোনো পরিবেশ দূষণ, ইটপাথর দালান কোঠার রুদ্ধশ্বাস অবস্থা আর যানবাহনের শব্দ দূষণ। ঢাকা ছিলো নির্মল সবুজের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় চমৎকার শহর। মোটামুটি বলা যেতে পারে পূর্ব বাংলার প্রতিটি জেলা-মহকুমা ও থানা শহরে ঢাকার মতো পরিবেশ বজায় ছিল। তখন প্রতিটি স্কুল-কলেজগুলিতে জেলা ভিত্তিক ফুটবল প্রতিযোগীতা হতো এবং এই সুন্দর প্রতিযোগীতা থেকে নতুন নতুন সম্ভবনাময় ফুটবলার তৈরী হতো। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, গত তিন দশক ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খেলার মাঠগুলি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক মাঠ বেদখল হয়ে নিমার্ণ হচ্ছে বাজার, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়সহ নানা ধরনের স্থাপনা। কোনো কোনো মাঠে উন্মুক্ত জায়গা থাকলেও খেলার পরিবেশ নেই। এর ফলে শিশু-কিশোররা খেলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ফুটবল, হকি, ক্রিকেটসহ দেশের অন্যান্য খেলাগুলিতে।
১৯৫৮ সালের দিকে পাকিস্তানে আগা খান গোল্ড কাপ নামে ক্লাব ভিত্তিক টুর্নামেন্ট শুরু হয়। এই টুর্নামেন্টের বদৌলতে পূর্ব বাংলার ফুটবলে এক নবজাগরণের সৃষ্টি হয়। ক্রমেই ঢাকা হয়ে ওঠে ফুটবলের পূন্যভূমিতে। পাকিস্তানের আগা খান ফাউন্ডন এই কাপ প্রবর্তন করে। আর এই ফাউন্ডেশনই আগা খান গোল্ড কাপ প্রতিযোগীতার যাবতীয় খরচ বহন করতো। গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিযোগীতা প্রতি বছর নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হতো। তবে
১৯৬৪ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ ও ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যূত্থানের সময় এই প্রতিযোগীতা বন্ধ ছিল। এই টুর্নামেন্টে পূর্ব বঙ্গসহ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, কাতার, ওমানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ক্লাব অংশগ্রহন করতো। ওই সব দেশের ফুটবলারদের সাথে টেক্কা দিয়ে পূর্ব বাংলার দামাল ছেলেরা ফুটবল খেলতো। তীব্র প্রতিযোগীতার মাধ্যমে প্রতিটি টিমের সাথে খেলা হতো। দর্শকরা আনন্দ-উল্লাসের দ্বারা পুরো গ্যালারি মাতিয়ে রাখতো। স্বাগতিক দেশ হিসেবে এই টুর্নামেন্টে পূর্ব বাংলা অতিরিক্ত কোনো সুযোগ-সুবিধা নিত না। তবে কখনো খেলায় সাফল্য আর্জন করলেও কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন আনুকূল্য পাওয়া যেতো না। তারপরও বাংলার দুরন্ত ছেলেরা হালছাড়েনি, তারা ফুটবলে তাদের দক্ষতা ও নিপুণতা অক্ষুন্ন রেখেছে। ক্লান্তি, অর্থ লোভ, বিলাসিতা ও কাপুরূষতা তাদেরকে তেমন স্পর্শ করতে পারেনি। দেশপ্রেম, আত্মসম্মানবোধ, একাগ্রতা ও দৃঢ়তা তাদের মধ্যে জাগ্রত ছিল। (চলবে)
খায়রুল আকরাম খান
ব্যুরো চীফ: দেশ দর্শন
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized