শুক্রবার রাত ৩:০২, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত ইসলাম তরবা‌রির জো‌রে প্রতি‌ষ্ঠিত হয়‌নি: আলেমদের সঙ্গে মোকতা‌দির চৌধুরী

ফুটবল ও বাংলা‌দেশ (২য় পর্ব): খায়রুল আকরাম খান

৫৩৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

পঞ্চাশ ও ষাটের দশ‌কে ফুটবল, হ‌কি ও ক্রিকে‌টে পা‌কিস্তা‌নি মাকরানি (উর্দুভাষী) প্লেয়ার‌দের এক‌চে‌টিয়া দাপট ছি‌লো। সেই বৈরী প‌রি‌বে‌শে পাকিস্তা‌নের ২৪ বছ‌রে মাত্র ২৪ জন বাঙা‌লি ফুটবলার পা‌কিস্তান জাতীয় দ‌লে  খেলার সু‌যোগ পে‌য়ে‌ছেন এবং দক্ষতার স‌ঙ্গে খে‌লে‌ছেন। তারা হ‌লেন-সাহেব আলী, তারপদ, নবী চৌধুরী, ফজলুর রহমান আরজু, আব্দুর র‌হিম, চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী, তাজুল ইসলাম, এম ওয়া‌জেদ আলী, আশরাফ চৌধুরী, কবীর, মঞ্জুর হাসান মিন্টু, মো. আমীর জাং গজনবী, আবুল খা‌য়ের, সেকান্দর আলী, জ‌হিরুল হক, দেবনাথ, বলাই দে, প্রতাপ শংকর হাজরা, হা‌ফিজ উদ্দীন, গোলাম সারওয়ার টিপু, শহীদুর রহমান সান্টু, জাকা‌রিয়া পিন্টু, কাজী মাহমুদ হাসান ও মো. নুরুন্নবী। কিন্তু দুঃখজনক ব‌্যাপার, বর্তমান প্রজ‌ন্মের অ‌নে‌কেই হয়‌তো ফুটবল জগতের এই সব রত্ন‌দের নাম জা‌নেন না! এসব প্রতিভাবন ক্রীড়া‌বিদরা নিরলস শ্রম, অধ‌্যবসায় এবং মেধা দি‌য়ে নি‌জেরা হ‌য়ে‌ছেন আ‌লো‌কিত, বি‌শ্বের দরবা‌রে দেশ‌কে ক‌রে‌ছেন সম্মা‌নিত।

পূর্ব বাংলার ফুটব‌লের এই রত্নরা ছিলেন পূর্ব ও প‌শ্চিম পা‌কিস্তা‌নের অন‌্যান‌্য  খে‌লোয়াড়‌দের চে‌য়ে  কিছুটা ব‌্যতিক্রমধর্মী এবং তা‌দের খেলার স্টাইলেও বেশ ভিন্নতা ছি‌লো।  তারা তৎকালীন সম‌য়ের বিশ্বকাপ ফুটব‌লের তার‌কা খে‌লোয়াড়‌দের সমকক্ষ ছি‌লেন। ছন্দময় ও নান্দ‌নিক খেলা প্রদর্শ‌নের জন‌্য তারা মানু‌ষের নিকট আজও বরণীয় ও পূজনীয় হ‌য়ে আ‌ছেন। উ‌ল্লেখ‌্য, ১৯৪৮ পা‌কিস্তান ফুটবল ফেডা‌রেশন ফুটব‌লের স‌র্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা ও ১৯৫৪ সা‌লে আঞ্চ‌লিক সংস্থা এ‌শিয়ান ফুটবল কন‌ফেডা‌রেশ‌নের সদস‌্যপদ লাভ ক‌রে। আর ওই সময় থে‌কেই ঢাকার মা‌ঠে নতুন নতুন ফুটবলা‌দের আ‌বির্ভাব ঘট‌তে থা‌কে। তৎকালীন পা‌কিস্তান জাতীয় দ‌লে সু‌যোগ পাওয়া পূর্ব বাংলার ক‌য়েকজন খ‌্যা‌তিমান ফুটবলার‌দের খেলার সাধনা-পদ্ধ‌তি,নৈপণ‌্য ও দক্ষতা সম্প‌র্কে অ‌তি সং‌ক্ষে‌পে আ‌লোচনা করা হল।

উদীয়মান ফুটবলার মো. আমীর জাং গজনবী পা‌কিস্তান সৃ‌ষ্টির পর পরই ১৯৪৮ সা‌লে ঢাকা ও‌রি‌য়েন্টাল ক্লা‌বে যোগদান ক‌রে ঢাকা লী‌গে খেলা শুরু ক‌রেন। তার অসম নৈপু‌ণ্যে ও‌রি‌য়েন্টাল ক্লাব ওই  বছরই পূর্ব পা‌কিস্তান লী‌গ চ‌্যা‌ম্পিয়ন হয়। ফ‌লে পূর্ব পা‌কিস্তা‌নের  গভর্নর জেনা‌লের তা‌কে সংব‌র্ধিত ক‌রেন।  তি‌নি সব সময় ডি‌ফে‌ন্সে খেল‌তেন। বল পা‌য়ে তি‌নি হ‌য়ে উঠ‌তেন অপ্রতি‌রোধ‌্য। বল নাগা‌লের ম‌ধ্যে পে‌লেই দুরন্ত গ‌তি‌তে ছুট‌তেন,তার নাগাল পাওয়া খুব ক‌ঠিন হ‌য়ে পড়‌তো। তাঁর ছিল অফুরন্ত দম,স্ট‌্যা‌মিনা ও স্ট্রোংথ। তি‌নি জীব‌নের মাঝামা‌ঝি সম‌য়ে মোহা‌মেডান ক্লা‌বে যোগদান ক‌রেন। ১৯৬৩ সা‌লে তি‌নি খেলা থে‌কে অবসর গ্রহন ক‌রেন। ক‌তিথ আ‌ছে, ১৯৫৭ সা‌লে টো‌কিও‌তে অনু‌ষ্ঠিত ৩য় এ‌শিয়ান গেম‌সে খেলার মা‌ঠে পা‌কিস্তান দ‌লের ডি‌ফে‌ন্সে বি‌শেষ দুর্বলতা দেখা দেয়, এই সংকটকা‌লে এর থে‌কে প‌রিত্রান পাওয়ার জন‌্য এক‌টি বি‌শেষ বিমা‌নে ক‌রে গজনবী‌কে টো‌কিও‌তে উ‌ড়ি‌য়ে‌  নি‌য়ে যাওয়া হয় এবং পাকিস্তান দল চ‌্যা‌ম্পিয়ন হয়, সা‌থে গজনবী বেস্ট প্লেয়ার হি‌সে‌বে ভূ‌ষিত হন। ওই ঘটনার পর তাঁর নাম সমগ্র পা‌কিস্তা‌নে ছ‌ড়ি‌য়ে প‌ড়ে। তাঁর ম‌তো এমন বিচক্ষন ফুটবলার পাওয়া খুবই দুরূহ ব‌্যাপার।

গজনীর আ‌রেক সতীর্থ ছি‌লেন চিহ্লআ মং চৌধুরী মারী। মারী না‌মেই তি‌নি অ‌ধিক প‌রি‌চিত ছি‌লেন। ১৯৫২ থে‌কে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত রেলও‌য়ে  ব্ল‌ু, ওয়ান্ডার্স ক্লাব,আদাজ স্পো‌টিং, ফায়ারসা‌র্ভিস ও ঢাকা মোহা‌মেডান স্পো‌টিং ক্লা‌বে নিয়‌মিতভা‌বে খে‌লে‌ছেন। তি‌নি জাতীয় দ‌লের হ‌য়ে শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, মাল‌য়ে‌শিয়া, হংকং, চীন, টো‌কিও ও কলকাতায় খে‌লে‌ছেন।

তাছাড়া তা‌কে ঘি‌রেই  তৎকালীন পূর্ব পা‌কিস্তা‌নে গ‌ড়ে উ‌ঠে‌ছিল  ত্রয়ী ক‌বির-আশরাফ-মারী। তৎকালীন বিশ্বকা‌পে পে‌লে-‌দি‌দি-গ‌্যা‌রিঞ্চার ম‌ধ্যে এ ধর‌নের ত্রয়ী গ‌ড়ে উ‌ঠে‌ছিল। মারী বে‌শিরভাগ সময় ফ‌রোয়া‌র্ডে খেল‌তেন। ত‌বে দ‌লের প্রয়োজ‌নে মা‌ঝেম‌ধ্যে লেফট ইন প‌জিশ‌নেও খেল‌তেন। তার ড্রিব্লিং, বল রি‌সি‌ভিং আর বাঁ পা‌য়ের  দুরন্ত শট দেখ‌তে সে সময় ঢাকার মা‌ঠে হাজার হাজার দর্শ‌কের সমাগম ঘটত। তি‌নি নি‌জে গোল দি‌তেন এবং অন‌্যকে দি‌য়েও করা‌তেন। বল পা‌য়ে তাঁর ড্রিব্লিং ছিল ব‌ঙ্গোপসাগ‌রের ঢেউ‌য়ের মত সাবলীল। ঢাকা লি‌গে মারীর গোল সংখ‌্যা দুইশ’র বে‌শি। এ মাইন ফলক এখ‌নো পর্যন্ত অন‌্য কো‌নো ফুটবলার স্পর্শ কর‌তে পা‌রেন‌নি! ১৯৫৭ সা‌লে পা‌কিস্তান জাতীয় চ‌্যা‌ম্পিয়নশি‌পে মারীর নেতৃ‌ত্বে পূর্ব পা‌কিস্তান সাদা দল ফাইনা‌লে ২-১ গো‌লের ব‌্যবধা‌নে পরা‌জিত হ‌য়ে রানার্সআপ হয়। ত‌বে সেই টুর্না‌মে‌ন্টের সেরা খে‌লোয়া‌ড়ের পুরস্কার ও‌ঠে তাঁর হা‌তেই। ঢাকা ও বাই‌রের মা‌ঠে তাঁর দশ‌র্কের কম‌তি হ‌তো না কখ‌নো। মারীর খেলার নিপুণতা ও চা‌রি‌ত্রিক বৈ‌শি‌ষ্ট্যের কার‌ণেই এখ‌নো বাংলা‌দে‌শের তারকা ফুটবলারা তাঁ‌কে আদর্শ মা‌নেন।

স্বাধীন বাংলা ফ‌ুটবল দ‌লের অ‌ধিনায়ক মোহাম্মদ জাকা‌রিয়া পিন্টু ছি‌লেন ঢাকার মা‌ঠে একজন অসাধারণ ফুটবলার। ১৯৫৯ থে‌কে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত নিরলসভা‌বে খে‌লে‌ছেন ঢাকা ওয়ান্ডার্স ও ঢাকা মোহামেডান স্পো‌টিং ক্লা‌বে।  খেলা শুরু ক‌রেন ওয়ান্ডার্স ক্লা‌বে যোগদা‌নের মাধ‌্যমে। তি‌নি সব সময় হাফ ব‌্যাক হি‌সে‌বে খেল‌তেন।‌ তাঁর উচ্চাতা ছিল প্রায় ৫ ফ‌ুট ৯ ই‌ঞ্চি। শারী‌রিক গঠন ও নিপুণতার কার‌ণে তা‌কে ডি‌ঙ্গি‌য়ে সহ‌জে কেউ ডি-বক্স পার হ‌তে পার‌তো না। থাক‌তেন চী‌নের প্রাচী‌রের ম‌তো । দুদার্ন্ত ফুটবল দক্ষতার কার‌ণে তার নাম হয় “কালাপাহাড়”। ওয়ান্ড‌র্সের পর তি‌নি মোহা‌মেডান স্পো‌টিং ক্লা‌বে যোগদান ক‌রেন। ফুটবল ক‌্যা‌রিয়া‌রের শেষ পর্যন্ত আট বার তি‌নি মোহা‌মেডা‌নের অ‌ধিনায়কত্ব ক‌রেন। ওই সম‌য়ে মোহা‌মেডান ক্লা‌ব তারকা খে‌লোয়া‌ড়ে প‌রিপূর্ণ ছিল। উক্ত প‌রিবে‌শে আট বার মোহা‌মেডা‌নের অ‌ধিনায়ক হওয়া বিস্ময়কর ব‌্যাপার ব‌টে। ১৯৬০, ১৯৬৩, ১৯৬৫, ১৯৬৬ ও ১৯৬৮ সা‌লে তি‌নি লিগ শি‌রোপার স্বাদ পান। তাঁর নেতৃত্বাধীন “স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল” ভার‌তের মা‌টি‌তে ১৬ টি ম‌্যা‌চে অংশ নি‌য়ে ১২ টিতে জয়  ও দুই‌টি‌তে পরাজয় হয়। তি‌নি ছি‌লেন ‌নি‌র্লোভ, ত‌্যাগী ও নিষ্ঠাবান ফুটবলার। ফুটব‌লের প্রতি অ‌তি‌রিক্ত ভালবাসার কার‌ণে ভা‌লো সরকা‌রি চাক‌রি পে‌য়েও তা তি‌নি প্রত‌্যাখান ক‌রেন। ক‌তিথ আ‌ছে, জাকা‌রিয়া পিন্টু মধ‌্য ষা‌টের দশ‌কে যখন বি‌য়ে ক‌রেন তখন ব‌াসররা‌তে নববধূ‌কে একা রে‌খেই চ‌লে গি‌য়ে‌ছি‌লেন ফুটবল খেল‌তে, যা ওই সম‌য়ে তাঁর সতীর্থ‌দের ম‌ধ্যে আ‌লোড়ন সৃ‌ষ্টি ক‌রে‌ছিল। অবাক ও বি‌স্মিত হ‌য়ে‌ছি‌লেন অ‌নে‌কে। বর্তমা‌ন ফুটবল বি‌শ্বে এ ধর‌নের ন‌জির সচরাচর দেখা যায় না। জাকা‌রিয়া পিন্টুর ম‌তো ফুটবলার পাওয়া জাতির জন‌্য বিরাট ভা‌গ্যের ব‌্যাপার।

জাকা‌রিয়া পিন্টুর ঘনিষ্ঠ সতীর্থ ও স্বাধীন বাংলা ফুটবল দ‌লের সহ-অ‌ধিনায়ক ছি‌লেন প্রতাপ শংকর হাজরা। ১৯৬০ থে‌কে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ঢাকার মা‌ঠে খুব নিপুণতার স‌ঙ্গে ফুটবল খে‌লে‌ছেন। তি‌নি খে‌লে‌ছেন ওয়ারী ক্লাব, কম্বাইন্ড ক্লাব, ভো‌ক্টো‌রিয়া স্পো‌টিং ক্লাব, ঢাকা মোহা‌মেডান স্পো‌টিং ক্লাব ও স্বাধীনতার পর আবাহনী ক্লা‌বে। আবক হওয়ার বিষয় প্রতাপ হাজরা ফুটব‌লে খ‌্যা‌তি অর্জন কর‌লেও হ‌কি ও ক্রিকে‌টেও বেশ দক্ষ ছি‌লেন। তি‌নি একা‌ধিকবার বাংলা‌দেশ জাতীয় দ‌লের হ‌য়ে হ‌কি ও ক্রিকেট খে‌লে‌ছেন। ১৯৬৩ সা‌লে মোহা‌মেডান ক্লা‌বে যোগদা‌নের পর তাঁর খেলার উৎকর্ষ ও জন‌প্রিয়তা বৃ‌দ্ধি পায়। উল্লেখ‌্য, ১৯৬৩,৬৫,৬৬, ৬৯,৭৫ ও ১৯৭৬ সা‌লে ফুটব‌লে মোহা‌মেডা‌নের চ‌্যা‌ম্পিয়ন দ‌লের সদস‌্য ছি‌লেন প্রতাপ হাজরা। তি‌নি ফ‌রোয়া‌র্ডে খেল‌তেন। আবার রাইট হা‌ফেও খেল‌তেন। কর্নার শ‌টে তি‌নি ছি‌লেন দুর্দান্ত। তাঁর কর্নার শ‌টের ৯০% ছিল অবধা‌রিত গোল। যখন তি‌নি কর্নার শট দি‌তেন তখন স্টে‌ডিয়ামে গ‌্যালা‌রিতে পিনপতন নীরবতা বিরাজ কর‌তো। প্রতাপ হাজরার কর্নার শট ছি‌লো রং ধনুর ম‌তো ; বল ঘুরে গোলপো‌স্টের ত্রিকোণাকৃ‌তির ম‌তো জায়গা দি‌য়ে জা‌লে ঢুকত। এই শট রক্ষা করা গোল‌কিপা‌রের জন‌্য ক‌ঠিন এবং বেকায়দার ব‌্যাপার। এছাড়াও প্রতিপ‌ক্ষের আক্রমন রু‌খের দেওয়ার জন‌্য দ্রুতগ‌তি‌তে নি‌চে নে‌মে প্রতি‌রোধ গ‌ড়ে তুল‌তে পার‌তেন। দুর্দান্ত ফুটবলার হি‌সে‌বে আজও প্রতাপ শংকর হাজরা মানু‌ষের নিকট স্মরণীয় হ‌য়ে আ‌ছেন।

কিংবদ‌ন্তি ফুটবলার মো. আ‌মীর জাং গজনবীর যোগ‌্য অন‌ুসারী ঢাকার মাঠ কাঁপা‌নো ফুটবল খে‌লোয়াড় হা‌ফিজউদ্দীন ১৯৬২ থে‌কে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ফায়ারসা‌র্ভিস, ওয়ান্ডার্স ও মোহা‌মেডান স্পো‌টিং ক্লা‌বে খে‌লে‌ছেন। তি‌নি ১৯৬৭ থে‌কে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত পা‌কিস্তান জাতীয় ফুটবল দলে খে‌লে‌ছেন। ১৯৭০ সা‌লে পা‌কিস্তান জাতীয় দ‌লের অ‌ধিনায়কও ছি‌লেন। বরাবরই তি‌নি স্ট্রাইকার হি‌সে‌বে ঢাকার মা‌ঠে ও দে‌শের বাই‌রে খে‌লে‌ছেন। স্টাইকার হি‌সে‌বে তি‌নি অত‌্যন্ত ক্ষিপ্রগ‌তিসম্পন্ন ছি‌লেন। তি‌নি যখন নীচ থে‌কে উপ‌রে বল নি‌য়ে দ্রুত‌বে‌গে  যে‌তেন, তখন কেউ তাঁ‌কে আট‌কি‌য়ে রাখ‌তে পার‌তো না। পু‌রো মাঠ তি‌নি দা‌পি‌য়ে বাড়‌া‌তেন। সহ‌যোগী খে‌লোয়াড়‌দের স‌ঙ্গে তাঁর সমন্বয়টা ভা‌লো ছিল। তি‌নি ছি‌লেন দ‌লের অ‌পিহার্য খে‌লোয়াড়। যে‌দিন হা‌ফিজউদ্দী‌নের খেলা থাক‌তো, সে‌দিন হাজার হাজার দর্শ‌কে গ‌্যালা‌রি পরিপূর্ণ হ‌য়ে যে‌তো! তাঁর সম‌য়ে ১৯৬৯,১৯৭৫, ১৯৭৬ ও ১৯৭৮ সা‌লে মোহা‌মেডান চ‌্যা‌ম্পিয়ন হ‌য়ে‌ছে। ১৯৬৮ সা‌লে জে‌তে আগা খান গোল্ডকাপ। ১৯৭৬ সা‌লে ছি‌লেন সাদাকা‌লো দ‌লের অ‌ধিনায়ক। পা‌কিস্তা‌ন জাতীয় দ‌লের হ‌য়ে হা‌ফিজউদ্দীন ইরান ও তুর‌স্কের মা‌ঠে খে‌লে‌ছেন। ১৯৭৩ সা‌লে ফায়ার সা‌র্ভি‌সের বিপ‌ক্ষে ৬-০ গো‌লে জি‌তে‌ছিল মোহা‌মেডান ক্লাব। অবাক হওয়ার বিষয়, সবগু‌লি গোলই হা‌ফিজউদ্দীন ক‌রে‌ছি‌লেন! স্বাধীন বাংলা‌দে‌শে ঢাকার মা‌ঠে তি‌নিই ফুটব‌লে প্রথম ডাবল হ‌্যাট‌ট্রিক ক‌রে‌ছি‌লেন! বর্তমা‌নে হা‌ফিজউদ্দী‌নের ম‌তো অসাধারণ ফুটবলার পাওয়া দুস্কর ব‌্যাপার।

ষাট ও সত্তর দশ‌কে  ঢাকার মাঠ কাঁপা‌নো ফুটবলার ছি‌লেন গোলাম সরোয়ার মোস্তফা টিপু। ‌তিনি ছি‌লেন কিংবদ‌ন্তি খে‌লোয়াড় হা‌ফিজউদ্দী‌নের সহ‌যোদ্ধা। ১৯৬৪ থে‌কে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত খে‌লে‌ছেন বি‌জি‌প্রেস, ওয়ারী, আজাদ স্পো‌টিং, ‌ভি‌ক্টো‌রিয়া, ওয়ান্ডার্স ও মোহামডান স্পো‌টিং ক্লা‌বে। অবাক হওয়ার বিষয় একজন ফুটবলার হ‌য়েও তি‌নি ভাল গাই‌তে, নাচ‌তে ও আবৃ‌ত্তি কর‌তে পার‌তেন। ১৯৬৮ সা‌লে আগা খান গোল্ডকাপ ফুটবল টুনা‌র্মে‌ন্টের ফাইনা‌লে অবর্তীণ হয় ঢাকা মোহা‌মেডান বনাম শ্রীলঙ্কা। সে ম‌্যা‌চে মোহা‌মেডান ৫-১ গো‌লে জয়লাভ ক‌রে তৃতীয় বা‌রের ম‌তো চ‌্যা‌ম্পিয়ান হবার গৌরব অর্জন ক‌রে। ওই ম‌্যা‌চে টিপু ক‌রে‌ছি‌লেন দুই গোল।  ঢাকার মা‌ঠে উক্ত ম‌্যাচ‌টি ছিল খুবই উ‌ত্তেজনাকর। এরপর টিপুর নাম দে‌শের সর্বত্র ছ‌ড়ি‌য়ে পার। এই ম‌্যাচ‌টি পা‌কিস্তান টে‌লি‌ভিশ‌নে সরাস‌রি প্রচা‌রিত হ‌য়ে‌ছিল। খেলার মা‌ঠে টিপু খেল‌তেন ডি‌ফেন্ডার হি‌সে‌বে। তি‌নি কাউ‌কে আঘাত কর‌তেন। ত‌বে বদ‌মেজা‌জি ছি‌লেন। বল নিজ আয়‌ত্তে রাখার ক্ষে‌ত্রে বেশ দক্ষ ছি‌লেন। বল নি‌জের আয়‌ত্তে রাখ‌তে নি‌জের পে‌শিবহুল পা‌কে দৃঢ়ভা‌বে দাঁড়  করা‌তেন। সেটাই যেন হ‌য়ে যেত প্রতিরক্ষার এক প্রাচীর। ওই দৃঢ় পা‌য়ের প্রতিরক্ষা‌কে পরাস্ত ক‌রে বল কে‌ড়ে নেওয়া ছিল ক‌ঠিন ব‌্যাপার! বরং ওই পা‌য়ের ধাক্কা খে‌য়েই প্রতিপ‌ক্ষের খে‌লোয়াড় ছিপ‌কে পড়ত। কিন্তু বর্তমা‌নে দেখা যায় বিশ্বকাপে ফুটবল তারকা খে‌লোয়াড়র‌া  প্রতিপক্ষের সামান‌্য হাতস্প‌র্শেই চিৎপটাং হ‌য়ে প‌ড়ে! আবার অ‌নেক সময় সামান‌্য আঘা‌তেই  গুরুতর আহত হন এবং এমন‌কি অ‌নে‌কে আঘাত না পে‌য়েও আঘাত পাওয়ার অ‌ভিনয় ক‌রেন! স‌ত্যিকারভা‌বেই ষাট ও সত্তর দশ‌কে ঢাকার মা‌ঠে টিপু ছি‌লেন সেরা‌দের সেরা ফুটবলার।

পঞ্চাশ ও ষাট দশ‌কের এসব খে‌লোয়াড়রা যখন বল নি‌য়ে ছ‌ুট‌তেন তখন এক নান্দ‌নিক দৃ‌শ্যের অবতারনা হ‌তো। সেখা‌নে থাকত গ‌তিময়তা, থাকত ছন্দ। কিন্তু প‌রিতা‌পের বিষয়, দি‌নে দি‌নে এই ছন্দ যেন ফুটবল থে‌কে হা‌রি‌য়ে যা‌চ্ছে। পঞ্চাশ ও ষাট দশ‌কের এসব প্লেয়া‌দের রোমাঞ্চকর কা‌হিনী শো‌নে অ‌নে‌কের ম‌নেই প্রশ্ন জাগ‌তে পা‌রে-এত ভা‌লো  খে‌লেও কেন পূর্ব ব‌ঙ্গের জাতীয় ফ‌ুটবল দল তৎকালীন সম‌য়ে বিশ্বকা‌পে যে‌তে পারল না? এর যথার্থ উত্তর হ‌লো-তৎকালীন সম‌য়ে রাজ‌নৈ‌তিক ও অর্থ‌নৈ‌তিকভা‌বে প‌শ্চিম পা‌কিস্তা‌নের চে‌য়ে পূর্ব পা‌কিস্তান পি‌ছি‌য়ে ছিল। প্রচার মাধ‌্যম এখনকার ম‌তো এত শ‌ক্তিশালী ছিল না এবং তথ‌্য প্রযু‌ক্তিও এত উন্নত ছিল না। এছাড়াও আন্তজার্তিক প্রশিক্ষন, লিয়াজো ও উপযুক্ত পৃষ্ঠ‌পোষকতার অভাব ছিল। য‌দি এসব ঘাট‌তি যথাযথভা‌বে পূরণ হ‌তো, তাহ‌লে নিঃস‌ন্দে‌হে পূর্ব  ব‌াংলার দুরন্ত ছে‌লেরা বিশ্বকাপ ফুটব‌লে  খেলার সু‌যোগ পে‌তো। কারণ তৎকালীন বিশ্বকাপ ফুটব‌লে অংশগ্রহনকারী ফুটবলারদের চে‌য়ে বাঙা‌লিদের যোগ‌্যতা কো‌নো অং‌শেই কম ছিল না।(চল‌বে)

খ‌ায়রুল আকরাম খান

ব‌্যু‌রো চীফ: দেশ দর্শন

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

মব জা‌স্টিস : প্রেক্ষিত বাংলা‌দেশ

সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামী…

১৬ বছরের অপকর্ম ধামাচাপা দিতেই…