দেশে বেকারত্বের হার অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রচ্ছন্ন বেকারত্বের হার আরও উদ্বেগজনক। মানহীন শিক্ষাব্যবস্থা আর আমদানি-নির্ভর অর্থনীতি এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। গ্রাজুয়েশনের পরও এদেশে বেসরকারী চাকরীজীবিরা ১০/১২ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতে বাধ্য হচ্ছে। এদেশে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেও একজন মেধাবীকে টিউশনির জন্য ধর্ণা দিতে হয়ে দুয়ারে দুয়ারে। জেনারেল স্টুডেন্টদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো তথ্য প্রযুক্তিগত শিক্ষা যথেষ্ট নয়। ফলে দেশের শ্রমবাজারে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অনেকেই বিদেশি। যে হারে কর্পোরেট সেক্টর নামে পোশাকী প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়ছে সেহারে দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে উঠছেনা। এমবিবিএস পাস করা একজন ডাক্তারকেও কৌশলে খাটানো হচ্ছে একজন এইট পাশ ব্যবসায়ীর অধীনে। মাস্টার্স কমপ্লিট করা একজন শিক্ষার্থীকেও এমপিওভুক্ত কিংবা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নামমাত্র বেতনে খাটানো হচ্ছে দিনরাত। কোটানির্ভরতার কারণে অনেক মেধাবী নির্দিষ্ট বয়সসীমা অতিক্রম করার পরও দীর্ঘকালীন বেকারত্ব বহন করতে হচ্ছে। অর্থনীতি, ইংরেজি, বাংলা, গণিতের মতো বিষয় নিয়ে মাস্টার্স পাশ করা শিক্ষার্থীদের তো শিক্ষা উপযুক্ত কর্মসংস্থানে এটাচমেন্ট করানো এক প্রকার দুরূহ ব্যাপার।
উৎপাদনমুখী অর্থনীতি সচল না থাকায় দেশের সিংহভাগ শ্রমশক্তি প্রবাসী নাম ধারণ করে মেধা পাচারের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা কোথায় নেই বাংলাদেশী প্রবাসী। প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া একটা শ্রেণি তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী পাচ্ছেনা ফলে হতাশা বাড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। যারা দেশে থেকে ব্যবসা করতে চায় তারা ভুগে মূলধন সংকটে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে গড়ে উঠা অসংখ্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চিরদিনের মতো মুদ্রাস্ফীতির ভয়াবহ গ্রাসে বিপন্ন হয়ে পড়ছে প্রতিদিন। ফলে অতিদ্রারিদ্রের হার দিন দিন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হচ্ছে।
একটি দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে নির্ভর করে দেশের কৃষিজ সম্পদের প্রাচুর্য্য, পর্যটনের মতো আর্থিক খাত, নিত্যপণ্য উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের উপর। অপরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থা, নদী শাসনের ভয়াবহতা দেশের কৃষি নির্ভর অর্থনীতিকেও অনেকটা কোণঠাসা করে রেখেছে। সকল ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার বৃদ্ধি শ্রমভিত্তিক কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ফলে কর্মসংস্থানের অভাব আর ঋণের ফাঁদে দেশের বেশিরভাগ মানুষ। এভাবে দায়সারা ভাবে চলতে থাকলে আগামী দশ/ বারো বছরে এর ভয়াবহতা স্থায়ী দূর্ভিক্ষের দিকে নিয়ে যাবে সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে। সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠন করতে হলে এসব বিষয়গুলো মাথায় নিয়ে প্রান্তিক পর্যায় থেকে কাজ করতে হবে। আর তা না হলে সোনার বাংলার লালিত স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। মনে রাখা প্রয়োজন বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে অন্ধকারে রেখে একটি দেশের অর্থনীতি ও সমাজ কখনো আলোর মুখ দেখতে ব্যর্থ হবে এটাই মূল প্রশ্ন।
ইমতিয়াজুল ইসলাম সৌরভ
এলএলবি, শিক্ষানবিশ আইনজীবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ কোর্ট
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized