মসজিদে জাকির মাহদিন ও আমি শুয়ে শুয়ে দীর্ঘক্ষণ নিজেদের পারস্পরিক চিন্তা নিয়ে কথা বলি। মসজিদে শুতে যাবার আগে জাবেদ ভাই আমাদের জানিয়ে দিলেন ভোর ৪:১৫তে ফজরের নামাযের আযান হয়। তাই আমাদের আযানের আগেই উঠতে হবে। দুজনে মসজিদকেন্দ্রিক অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলি। কথা বলতে বলতে কোন ফাঁকে আমি ঘুমিয়ে পড়ি তা বলতেই পারি না। তবে ফজরের আযানের পূর্বেই ঘুম ভাঙ্গে অর্থাৎ তখন ৪:০০ বাজে।
আত্মপরিচয় ও আত্মশুদ্ধির সফর প্রথম পর্ব পড়ুন
দুজনই ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাযের প্রস্তুতি নেই। নামায পড়ে আবার একটু বিশ্রাম নিতে জাবেদ ভাইয়ের জন্য নির্ধারিত কক্ষে যাই। সকালে মসজিদে আবার মক্তব থাকে। জাবেদ ভাই মক্তব শেষ করে আমাদের সকালের নাস্তার জন্য ডাক দেয়। নাস্তা অবশ্য এলাকার স্থানীয়দের বাসা থেকেই আসে। মসজিদগুলোতে ইমাম সাহেবের খাবার ব্যবস্থা বিভিন্ন বাড়িতেই থাকে। মেহমান আসলেও একই ব্যবস্থা হয়ে থাকে। নাস্তা শেষ করে কী করব দুইজনে ভাবছিলাম।
এর মধ্যে জাবেদ ভাই আমাদের জানায় যে উনার এখন মাদরাসায় যেতে হবে। উনি মূলত সরকারের `দারুল আরকাম প্রজেক্টের` একজন সদস্য সচিব এবং শিক্ষক। এ প্রজেক্টটি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত হয়। করোনাকালীন সময় নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বন্ধ হবার উপক্রম হয়। তবে উনারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রজক্টটি সচল রাখে। এবারে গন্তব্য কোনাঘাটা জাবেদ ভাইয়ের কর্মস্থলে। আমরা প্রস্তুত হয়ে মসজিদ থেকে বের হই। কাশীরামপুর থেকে নয়নপুর বাজারে যেতে হবে। এখানে সাধারণ মানুষের চলাচলের একমাত্র বাহন হল ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক। আমরা বের হয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকি জাবেদ ভাই জানাল গাড়ি পাওয়া মুশকিল। তাই আমরা তিন জন হাঁটতে থাকি। অনেকক্ষণ হাঁটার পর গাড়ি পায়। প্রথমে নয়নপুর বাজারে যাই তারপর আবার গাড়ি করে কোনাঘাটা পৌঁছাই।
টিনশেড ও টিনের বেড়া দিয়ে তৈরি করা চারটি রুম। তিনটা শ্রেণিকক্ষ ও একটি অফিস রুম। সামনে বাচ্চাদের জন্য গাছপালা দিয়ে ঘেড়া একটু ফাঁকা জায়গাও রয়েছে। তবে জায়গাটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন ছিল। তিনি এটিকে সরকারের হাতে প্রজেক্টের জন্য হস্তান্তর করেন। জাবেদ ভাই অফিস রুমে আমাদের নিয়ে চেয়ারে বসতে দিল। উনারা এখানে চারজন শিক্ষক ও একজন অফিস সহায়ক আছে। শ্রেণিকক্ষ তিনটি থাকলেও একটা কক্ষ ভাঙ্গাচুরা টেবিলের জন্য বরাদ্দ। বাকি দুইটা ক্লাসের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আশেপাশে কিছুদিন পূর্বেও স্কুল না থাকায় বেশ ভালই ছাত্রছাত্রী ছিল। এখন গ্রামে কিন্ডারগার্টেন স্কুল হওয়ায় ছাত্রছাত্রী কম আসে। অথচ এখানে সম্পূর্ণ বিনা খরচে পাঠদান করা হয়। আরও দুইজন শিক্ষক আসল তাদের সাথে পরিচিত হলাম। এর মধ্যে জাবেদ ভাই জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে কিছু মাসিক ও ত্রৈমাসিক পত্রিকা এসেছে। সেগুলো একটু নাড়াচড়া করে দুইজন দেখতে থাকলাম। ক্লাস সাধারণত দুই ঘণ্টা হয়ে থাকে। আজকে ঈদুল আজহার ছুটি দিবে। তাই একটু তাড়াতাড়ি ছুটি হবে। ছুটির পরে মাদরাসা বন্ধ করে দেয় অফিস সহায়ক। রাস্তায় হাঁটতে থাকি। একটু সামনে আসার পর একটি ব্রিজ। ব্রিজটি সালদা নদীর উপর।
জাবেদ ভাই বলে উনার করা একটি মসজিদ ও মাদরাসায় আমাদের নিয়ে যাবে। এটি গৌরাঙ্গুলায়। আমরা নয়নপুর বাজারে এসে ইজি বাইকে চড়ি বিদ্যানগরের উদ্দেশ্যে। বিদ্যনগর বাজারে নেমে জাবেদ ভাইয়ের পরিচিত একটি দোকানে বসি। সেখানে জাবেদ ভাইয়ের সাথে অনেকেই সৌজন্য সাক্ষাত করে। হালকা নাস্তা করে আমরা গ্রামের পথ ধরে হাঁটা শুরু করি। চারপাশে খোলা মাঠ আর সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা গৌরাঙ্গুলা গ্রামটি। এটি একেবারে সীমান্তের পাশে একটি গ্রাম। অনেক্ষণ হাঁটার পর গৌরাঙ্গুলা পশ্চিমপাড়া মসজিদে পৌঁছায়। মসজিদটি বেশ সুন্দর। সামনে একটি পুকুর আর তিন পাশে খোলা মাঠ। সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা মসজিদটি।
লেখকের আরও লেখা পড়ুন `ওল্ড দেশ দর্শনে`
দুইতলা বিশিষ্ট মসজিদটিতে নিচতলায় নামাযের স্থান ও উপরের তলায় মাদরাসা রয়েছে। তবে মাদরাসার কার্যক্রম বন্ধ। আরেকটি মাদরাসা হওয়ায় এবং মাদরাসার ফান্ড দুর্বল হওয়ায় মাদরাসাটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় মসজিদকেন্দ্রিক বহু মাদরাসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক জাঁকজমকভাবে মসজিদ মাদরাসা করে ঠিকই কিন্তু ইমাম ও হুজুরদের পর্যাপ্ত পারিশ্রমিক দিতে না পারায় বন্ধও করতে হচ্ছে। বস্তুগত উন্নয়ন হলেও মানুষের মনুষ্যত্বের উন্নয়ন হয়নি। প্রতিটা গ্রামও এখন বস্তুগত উন্নয়নে মেতে উঠেছে শহরের সাথে পাল্লা দিতে। অথচ আফসোস এ গ্রামগুলো প্রতিটি রাষ্ট্রের প্রাণ।
চলবে…
শরীফ উদ্দীন রনি
সাংবাদিক, কলামিস্ট
Some text
ক্যাটাগরি: Uncategorized
Pingback: তিন দিনের সফরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা (পর্ব-৩) – দেশ দর্শন