আমি নিজে বিভিন্ন সমস্যার ভুক্তভোগী। আত্মহত্যা, প্রতারণা, ধর্ষণের হুমকির স্বীকার আমরা। তবে কেন আমি প্রতিবাদী হবো না? কেন আমার লেখা আমি মুছে ফেলব আর বন্ধ করে দিব?
লেখালেখি এবং শিক্ষকতা ছোটবেলা থেকেই আমার শখ এবং স্বপ্ন ছিল। আমি যখন ৮ম শ্রেণির ছাত্রী, তখন থেকেই একটু একটু করে লেখার অভ্যাস করতাম এবং শিক্ষকতাকে নিজের পেশা হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি লিখতাম ডায়েরিতে নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। আবার ছিড়েও ফেলতাম; কেউ দেখবে, আমাকে নিয়ে ভাববে- এসব ভেবে। এই ধারণা এবং মানসিকতা আমার ভুল ছিল।
আমরা আমাদের জীবনের ঘটনাগুলো লিখলে বা কাউকে জানালে আমাদের সমস্যার সমাধান পেতে পারি। প্রতিশ্রুতি এবং শান্ত্বনা পেতে পারি। আমাদের করা ভুলগুলোকে সমালোচনা করলে ভুল শোধরাবার সুযোগ পেতে পারি। আমাদের আগামী প্রজন্মের যারা আসবে বা আসছে অথবা এখনও শিশু আছে তাদের সামনে নিত্যদিন ঘটছে বিভিন্ন ঘটনা। তারা দেখছে, কিন্তু কিচ্ছু বুঝতে পারছে না, মানসিক কষ্ট পাচ্ছে। তারা এগুলো থেকে বড় হয়ে শিক্ষা নিতে পারবে। আমরা আমাদের সমস্যা, দুর্বলতা এবং ভুলগুলো বলতে চাই না, শিকার করতে চাই না। তাহলে সমস্যার সমাধান হবে কিভাবে? এটা আমাদের চরম ভুল। নিজের ভুল তুলে ধরে সমালোচনা আর স্বীকার করার মাধ্যমে মানসিক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। এরপর ক্ষমার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা।
কেন আমি প্রতিবাদী নারী?
আমাকে শুনতে হয়েছে আমার ভাই একজন প্রতারক। আমার পিতা একজন প্রতারক। লেবাসে আলেম প্রকৃতপক্ষে জালেম বা জুলুমকারী। মৃত মা-কে, আমার বোনকে, আমাকে পেতে হয়েছে ধর্ষণের হুমকি । আমার পরিবার ইসলাম ধর্মের অনুসারী বলে আমাদের করা ভুলের কারণে শুনতে হয়েছে গোটা আলেম সমাজই ভালো না। ইসলাম ভালো না। অসম্মান করা হয়েছে শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামকে। ইসলামের বিধান পালনে নিষেধ এবং অনিহা সৃষ্টি।
আমাকে শুনতে হয়েছে আমার এবং আমার স্বামীর চরিত্রে সমস্যা, ননদের চরিত্রে সমস্যা, দেবর, শ্বশুরের চরিত্রে সমস্যা। শুনতে হয়েছে সারাজীবন ভাই-বাবা, শ্বশুর প্রতারণা করে চুরি করে টাকা আয় করেছে। শুনতে হয়েছে শ্বশুরবাড়ির করা ভুলের কারণে কেউ পাগল হয়ে যাওয়া, কারো আত্মহত্যা। এর প্রভাবের কারণে নোংরা ভাষায় গালি এবং চরিত্রহীন, প্রতারক, জুলুমকারী, খুনির পরিবার বলে আখ্যা। “প্রত্যেকেই নিজ কর্মের ফল ভোগ করতে হবে” (আল-কোরআন)
কে কতটা দোষী বা অপরাধী সেটা আমার সঠিকভাবে জানা নেই। শুধু সমস্যা তুলে ধরলাম। ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। প্রবাদ আছে ‘পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়।’ ভুল স্বীকার করে আমাদের ক্ষমার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আসতে হবে।
আমি নিজে বিভিন্ন সমস্যার ভুক্তভোগী। আত্মহত্যা, প্রতারণা, ধর্ষণের হুমকির স্বীকার আমরা। তবে কেন আমি প্রতিবাদী হবো না? কেন আমার লেখা আমি মুছে ফেলব আর বন্ধ করে দিব? আমার লেখায় কোনো ব্যক্তি বা কারো সম্মান নষ্টের জন্য নয়। পরিবার সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোই আমার উদ্দেশ্য। আমার সমস্যার সাথে আমার মত ভুক্তভোগী আরও দশজনের সমস্যার সমাধান এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই আমার লেখা। হাজারো ব্যস্ততার পরে গভীর রাতে নির্ঘুম কাটানো চোখে জল নিয়ে লেখাগুলো আমার। কেন মুছে ফেলব?
দয়া করে কেউ মোছার কথা বলবেন না। আমার লেখায় করা ভুলগুলো তুলে ধরুন। নিজেকে শোধরাবার সুযোগ পাবো। উৎসাহ দিতে পারেন। লেখার সাহসিকতা পাবো। কিন্তু না লেখার হুমকি দেবেন না।
তাকলিমা আক্তার
সহকারী শিক্ষিকা, হাজী মনছব উল্লাহ মডেল মাদ্রাসা
হুগলিয়া, শ্রীমঙ্গল
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম, শীর্ষ তিন