শনিবার রাত ৯:২৪, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ. ২৬শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ খবর:
‘আমার স্ত্রী মাকসুদাকে মেরে ফেলেছি, আমাকে থানায় নিয়ে যান’ বন্যার্তদের জন্য জাতীয় সাংবাদিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনাসভা ও দোয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া আয়কর আইনজীবী সমিতির অভিষেক ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠিত ২৮ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা একাডেমিতে ‘মাতৃভাষা উৎসব’ ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বোর্ড নির্বাচন অনুষ্ঠিত নির্বাচনী পোস্টারে লেমিনেশন ও পলিথিন ব্যবহাররোধে স্মারকলিপি ক্ষমতার স্বপ্নে বিভোর জাতীয় পার্টি: চুন্নু মাতৃভাষা একাডেমিতে কবিতা আড্ডা অনুষ্ঠিত হোমিওপ্যাথিক হেলথ এন্ড মেডিকেল সোসাইটি ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া সম্মেলন অনু‌ষ্ঠিত ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ার বিখ্যাত বাইশমৌজা বাজার ও গরুর হাট ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়ায় তরুণ আলেমদের ২য় মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত তরুণ আলেমদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

প‌হেলা বৈশা‌খে পান্তা-ইলিশ গ‌রি‌বের সা‌থে মশকরা

১১৭ বার পড়া হয়েছে
মন্তব্য ০ টি

ইলিশ মা‌ছ আমা‌দের জাতীয় ঐতি‌হ্যের অংশ। বাংলা‌দে‌শের জাতীয় মাছ হি‌সে‌বে এরই ম‌ধ্যে ভৌ‌গো‌লিক নিবন্ধনও পে‌য়েছে। বি‌শ্বের উৎপা‌দিত ইলি‌শের ৭০ থে‌কে ৭৫ শতাংশ বাংলা‌দে‌শে উৎপা‌দিত হয়। অন‌্যান‌্য মা‌ছের ম‌তো ইলিশ মাছ মৌসুম মে‌নে ডিম দেয় এবং প্রায় আট মা‌সে ধী‌রে ধী‌রে বা‌ড়ে। ত‌বে ইলিশের বি‌শেষ বৈ‌শিষ্ট‌্য হ‌চ্ছে এই মাছ প‌রিযায়ী মাছ। ইলিশ মাছ সাধারণত সমু‌দ্রের লবণাক্ত পা‌নি থে‌কে মিঠাপা‌নি এবং মিঠাপা‌নি থে‌কে আবার লবণাক্ত পা‌নি‌তে ফি‌রে যায়। এরই ম‌ধ্যে অ‌ক্টোবরে ডিম পাড়া এবং ডিম থে‌কে পোনা হ‌য়ে বেড়ে জাটকা এবং সর্ব‌শে‌ষ পর্য‌া‌য়ে ইলিশে রূপান্ত‌রিত হ‌তে জু‌নের শেষ হ‌য়ে যায়।

পরযায়ী এই ইলিশ মাছ শহ‌রের উঠ‌তি মধ‌্যবিত্ত শ্রেণি ও উচ্চ‌বিত্ত শ্রেণির নিকট পহেলা বৈশাখ পালন কা‌লে ব‌্যাপক জন‌প্রিয়তা পা‌চ্ছে। বাংলা নতুন বছ‌রের প্রথম দিন  পান্তাভা‌তের সা‌থে ইলিশ মাছ ভাজা, সা‌থে কাঁচা ম‌রিচ খাওয়া তা‌দের নিকট ‘বাঙা‌লি সংস্কৃ‌তি’ হি‌সেবে বেশ প‌রি‌চিত হ‌য়ে উঠ‌ছে। অথচ বাংলা নবব‌র্ষে পান্তাভা‌তের সা‌থে ভাজা ইলিশ মাছ খাওয়ার প্রচলন আগে একেবা‌রেই ছিল না! এর স‌ঙ্গে হাজার বছ‌রের বাঙা‌লি সংস্কৃ‌তির কো‌নো সং‌যোগ নেই!  বাংলা নববর্ষ সৌরপ‌ঞ্জিকা অনুসা‌রে প্রব‌তির্ত  হয়। ভা‌টি অঞ্চ‌লে অর্থাৎ পূর্ববাংলার কৃষ‌কের নিকট পান্তাভাত অ‌তি প‌রি‌চিত খাবার। এর স‌ঙ্গে বি‌ভিন্ন শাকসব‌জি ও শুট‌কি ভর্তা খাবা‌রের তা‌লিকায় থা‌কে। পান্তা-ইলিশ ক‌বে থে‌কে শুরু হ‌য়েছে, তা না জে‌নেই অ‌নে‌কে ব‌লে দি‌চ্ছেন এটাই না‌কি বাঙা‌লির প‌হেলা বৈশা‌খের ঐতিহ‌্য। কা‌জেই পান্তাভা‌তের সা‌থে ইলি‌শ মাছ খে‌তেই হ‌বে-তা না হ‌লে প‌হেলা বৈশাখ উদযাপন হ‌বে না, এমন ভ্রান্ত চিন্তা কাজ কর‌ছে। বিষয়‌টি হাস‌্যকরও ব‌টে। প্রকৃত প্রস্তা‌বে বলা যে‌তে পা‌রে পান্তাভা‌তের সা‌থে ইলিশের মতো দা‌মি মাছ খাওয়া এক ধরনের বিলাসীতা ছাড়া  আর কিছ‌ুই না।
বাংলা নবব‌র্ষে পান্তা-ইলিশ খে‌তে হবে এমনটা কখ‌নো দেখা যায়‌নি  ও শোনা যায়‌নি। কারণ গ্রা‌মের  মানুষ এসময় কাঁচা ম‌রি‌চের স‌ঙ্গে কাঁচা পেয়াঁজ দি‌য়ে অথবা শুক‌নো ম‌রিচ পুড়ি‌য়ে পান্তাভাত খায়। সেখা‌নে ইলিশ থা‌কে না, ইলিশ তো খুব দা‌মি মাছ। এটা গ্রা‌মের সাধারণ মানুষ কোথায় পা‌বে?
বাংলা সা‌হি‌ত্যের বিখ‌্যাত উপন‌্যাসীক  মা‌নিক ব‌ন্দোপাধ‌্যায় তার বিখ‌্যাত উপন‌্যাস ‘পদ্মা নদীর মা‌ঝি’-‌তে পদ্মা নদী‌তে জে‌লে‌দের ইলিশ ধরা নি‌য়ে তা‌দের জীবন-জী‌বিকার  কা‌হিনী সুন্দরভা‌বে বর্ণনা ক‌রে‌ছেন। উপন‌্যা‌সে ঋত‌ু‌ভি‌ত্তিক সামা‌জিক অবস্থানও ফু‌টে উঠে‌ছে। কিন্তু পু‌রো উপন‌্যা‌সের কোথাও বৈশাখ মা‌সে নববর্ষ পাল‌নের জন‌্য ইলি‌শের জোগা‌ন দেওয়ার কথা লেখা নেই।
বস্তুত, পান্তাভাত গ্রা‌মের সাধারণ মানু‌ষের খাবার। গরম মৌসু‌মে  রা‌তের ভাত খে‌য়ে যা বাড়‌তি থা‌কে সেই ভাত পা‌নি‌তে ভি‌জি‌য়ে রা‌খে সকা‌লে খাওয়ার জন‌্য, এটা চিরাচ‌রিত রেওয়াজ। খাদ‌্য অপচয় করা নী‌তি-‌নৈ‌তিকতা বি‌রোধী কাজ। পান্তাভা‌তের সংস্কৃ‌তি‌তে এই মধুর নৈ‌তিকতার দিক‌টি র‌য়ে‌ছে। গ্রা‌মের সাধারণ মানু‌ষের সহজসরল জীব‌নের প্রাত‌্যহিকতার ম‌ধ্যে এই জীবন‌বোধ নানাভা‌বে বিরাজ ক‌রে।  রা‌তের ভাত অ‌নেক সময় একটু বে‌শি ক‌রেও রান্না করা হয়, যেন সকা‌লে রান্নার সময়টুকু বাঁচা‌নো যায়। এখা‌নে পান্তাভা‌তের স‌ঙ্গে গৃহস্থা‌লি ও কৃ‌ষিকা‌জের জন‌্য সময় বের করার চিন্তা কাজ ক‌রে। একইভা‌বে শীতকা‌লে রা‌তের ভাত থাক‌লে তা সকা‌লে  একটু চুলায় ভে‌জে নি‌য়ে খ‌াওয়া হয়। এর এক‌টি পু‌ষ্টির দিক‌ও র‌য়ে‌ছে। কৃষকরা লাল চা‌লের পান্তাভাত খে‌য়ে মা‌ঠে গে‌লে শরী‌রে শক্তি পায়। তা‌দের তো শহ‌রের লোক‌দের ম‌তো কো‌নো ব্রেকফাস্ট নেই।  ‌তারা ভাতটাই খায়। এই ‌পান্তাভাত এক বেলার খাবারও হ‌য়ে যায়। স‌ঙ্গে লবন-‌পেঁয়াজ-ম‌রিচ পে‌লেই যথেষ্ট। আর  শহ‌রে প‌হেলা বৈশা‌খ পালনকা‌লে সাদা পান্তাভা‌তের সা‌থে ইলিশ মাছ ভাজার খাওয়ার অর্থ হ‌লো, কৃষ‌কের নিত‌্যদি‌নের জীবন‌কে ঠাট্টা ক‌রে পান্তাভাত‌কে ‘রাজকীয়” ক‌রে তোলা।  গ‌রি‌বের পান্তাভা‌তে রাজকীয় ইলিশ মাছ-এটা তা‌দের সা‌থে মশকরা করা ছাড়া আর কিছুই না।
আমা‌দের সবারই ম‌নে রাখ‌তে হ‌বে, বৈশা‌খে ইলিশ খাওয়া বাঙা‌লির সংস্কৃতি নয়, না খ‌াওয়াটাই বাঙা‌লির সংস্কৃ‌তি। পাশাপা‌শি এটাও ম‌নে রাখ‌তে হ‌বে প‌হেলা বৈশা‌খে সাদা পান্তাভা‌তের সাথে ইলিশ মাছ ভাজা খাওয়া গ্রা‌মের সহজ-সরল কৃষ‌কের সা‌থে তামাশা করারই নামান্তর।
গ‌বেষকদের ম‌তে, অতীতে বৈশা‌খে খরার মা‌সে যখন জ‌মি‌তে  কো‌নো ফসল হ‌তো না তখন কৃষকদের হা‌তে পয়সাও  থাকত না। তাই তা‌দের প‌ক্ষে ইলিশ কি‌নে খাওয়া সম্ভব হ‌তো না। সুতরাং এটা মো‌টেই স‌ত্যি নয় যে, কৃষকরা নববর্ষ উদযাপনে পান্তা-ইলিশ খে‌য়ে বছর শুরু করত। গ্রামবাংলায় নবব‌র্ষের উৎসবই ছিল খুব ছোট আকা‌রে। কৃষা‌ণি আগের রা‌তে এক‌টি ঘ‌টের ম‌ধ্যে(পাত্র) কাঁচা আমের কঁ‌চি ডাল ভি‌জি‌য়ে রাখত আর ভি‌জি‌য়ে রাখত আতবচ‌াল। আরেক‌টি পাত্রে চিরতার ডাল পা‌নি‌তে ভি‌জি‌য়ে রাখত। সকা‌লে কৃষক সেই চাল চি‌ভি‌য়ে খেত এবং ঘ‌টের চাল ভিজা‌নো পা‌নি কৃষা‌ণি তার শরী‌রে ছি‌টি‌য়ে দিত। তারপর কৃষক ‌চিরতার তে‌তো পা‌নি পান ক‌রে  হালচাষ কর‌তে গরু নি‌য়ে মা‌ঠে যেত। দুপুর বেলায় জ‌মির আইলে ব‌সে পান্তাভাত খে‌তো কাঁচা ম‌রিচ, কাঁচা পেঁয়াজ দি‌য়ে।  কখ‌নো কখ‌নো একটু শুটকি ভর্তা, একটু বেগুন ভর্তা  ও একটু আলু ভর্তা দি‌য়েও খেত।
যতটুকু জানা যায়, ৮০-এর দশ‌কে রমনা‌কে কেন্দ্র ক‌রে নবব‌র্ষে কিছু খাবা‌রের দোকান ব‌সে। যারা ছায়ান‌টের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দেখ‌তে যে‌তেন তারা সেখা‌নে খে‌য়ে নি‌তেন। এমনই একবার অল্প ক‌য়েকজন মি‌লে পান্তাভা‌তের সা‌থে ইলিশ মাছ ভাজা বি‌ক্রি কর‌লেন এবং তা সব বি‌ক্রি হ‌য়ে গেল। ক‌য়েকজন বেকার তরুণ এই কা‌জে সম্পৃক্ত ছি‌লেন।  তা‌দের উৎসা‌হিত কর‌তে এবং নতুন একটা কিছু প্রবর্তন করার মান‌সিকতা নি‌য়ে এক‌টি গ্রুপ এর  প্রচারনা চালা‌তে লাগ‌লেন। যা‌দের মধ্যে দ‌ু-একজন গণমাধ‌্যকর্মীও‌ ছি‌লেন। বিষয়টা আর ক‌য়েরকজ‌নের ম‌ধ্যে সীমাবদ্ধ থা‌কে‌নি। মুনাফা‌লোভী গ্রুপ স‌ক্রিয় হ‌য়ে ও‌ঠে। এরই ম‌ধ্যে বৈশা‌খের অ‌নেক কিছুই কর‌পো‌রেট‌দের দখ‌লে চ‌লে যায়
কর‌পো‌রেট সংস্কৃ‌তি সব‌কিছ‌ু‌কেই পণ‌্য বানা‌তে চায়। সেজন‌্য তারা সব সময় উপকরণ খোঁ‌জে। পান্তা-ইলিশ হ‌য়ে যায় সেই উপকরণ। পান্তা-ইলিশ হয় বৈশাখী খাবা‌রের ব্র‌্যান্ড!  মি‌ডিয়ায় ইলি‌শের নানা প‌দের রেসি‌পি, বিজ্ঞাপন, নাটক, সামা‌জিক অনুষ্ঠানসহ সবখা‌নে এমনভা‌বেই বৈশা‌খের স‌ঙ্গে ইলি‌শের সং‌যোগ  ঘটা‌নো হয় যে, ম‌নে হয় পান্তা-ইলিশ ছাড়া বৈশা‌খের কো‌নো মা‌নে নেই! যার প্রভাব প‌ড়ে আর্থ-সামা‌জিক প‌রিম‌ন্ডলে। এই অবস্থায় ইলি‌শের চা‌হিদা কেবল বাড়‌তেই থা‌কে। পাশাপা‌শি ইলি‌শের দামও বৃ‌দ্ধি পে‌তে থা‌কে।  শুরু হয় প‌রিপক্ক ইলি‌শের চরম সংকট-যার প্রেক্ষি‌তে নি‌র্বিচা‌রে জাটকা নিধন শুরু হয়।
গ‌বেষক‌দের ম‌তে, বছরজু‌ড়ে যত জাটকা ধরা হয় তার অন্তত শতকরা ৬৫ ভাগ মার্চ-এপ্রিল মা‌সে নিধন হয়। আর তা হয় কেবল প‌হেলা বৈশাখ‌কে কেন্দ্র ক‌রে। এসময় মা  ইলি‌শের ডিমসহ নিধন কেবল এক‌টি মাছ নয়, লাখ লাখ ভ‌বিষ‌্যতের ইলিশ‌কে ধ্বংস করা হয়। এতে ইলিশ মা‌ছের সংকট সৃ‌ষ্টি হ‌চ্ছে। সামা‌জিক এই অনাচার দূর হওয়া অ‌তিব জরু‌রি। অ‌ভিজ্ঞমহ‌লের ম‌তে, প‌হেলা বৈশা‌খে পান্তা-ইলি‌শের রেওয়াজ প‌রিহার ক‌রে ইলি‌শের বিকল্প হি‌সে‌বে সুলভ মূল্যের তেলা‌পিয়া বা বাটামাছ‌কে বে‌ছে নেওয়া যে‌তে পা‌রে। এতে ভ‌বিষ‌্যতে ইলি‌শের প্রজনন-উৎপাদন-সরবরাহ বেড়ে যা‌বে এবং সাধারণানুষও মা‌ঝেমধ্যে শ‌খের ইলিশ মাছ স্বল্প মূ‌ল্যে ক্রয় কর‌তে পার‌বে। পাশাপা‌শি  বৈশা‌খে ইলিশ নি‌য়ে কর‌পো‌রেট‌দের রমরমা ব‌্যবসাও চিরতরে দূর হ‌বে।
খায়রুল আকরাম খান
ব‌্যু‌রো চীফ : deshdorshon.com

Some text

ক্যাটাগরি: Uncategorized

Leave a Reply

শৈশবের ঈদ আনন্দ

সেনাবাহিনী, ১/১১ ও বিডিআর দরবার…