"তাদের সন্তানরা, ছেলেরা মেয়েদের মত এবং মেয়েরা ছেলেদের মত পোশাক-পরিচ্ছদে এমন উশৃংখল, যা তাদের পারিবারিক শান্তির বাঁধ ভেঙে দিয়েছে।"
চেয়ারম্যান, খ্যাতিমান মাস্টার, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, বড় হুজুর- এঁরা জনসম্মুখে প্রশংসিত। প্রশংসা তাদের অনেকের ভেতরে এমন অহংকার, গর্ব, বড়ত্ব, প্রশংসাপ্রিয়তা তৈরি করে যা পরবর্তীতে বংশপরম্পরায় সম্পদের মতো তাদের উত্তরাধিকারদের রক্তে প্রবাহিত হয়। এই দুষিত মানসিকতা সম্প্রসারণের বিষয়টা তাদের জন্য পাপের গাছ লাগানোর মতো হয়ে ওঠে।
আজকাল অর্থকেন্দ্রিক মানসিকতা আমাদের এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে- উদারতা, সৌহার্দ্য, ভালোবাসা প্রায় নিশ্চিহ্ন। কেমন যেন একটা পৃথিবী তৈরি হচ্ছে, চরম বৈষম্য ও দাসত্বের রাজত্ব কায়েম করার অপচেষ্টামুলক।
সিগারেটের ধোঁয়ার মতো এই বিষবাষ্প একজনের দ্বারা ১০ জনে এবং ক্রমান্বয়ে পুরো পৃথিবীকে দুষিত করছে। কেউ এখন কারো থেকে কম নয়, বলতে গেলে আমি নিজেও। উঁচু শ্রেণীর মানুষ থেকে শুরু করে একজন রিকশাওয়ালা পর্যন্ত কড়া অহংকার, অহমিকা, গর্ব, বড়ত্ব, প্রশংসাপ্রিয়তার দাবিদার। যা মানবতা বা একজন মানুষের পক্ষে কস্মিনকালেও ভাবা ঠিক নয়।
কেন নয়? কারণ সে প্রতিনিয়ত কোন না কোন বস্তু, প্রাণী তথা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ ও মুখাপেক্ষী। সেই জন্মের দিন থেকে শুরু করে শেষ অব্দি কারো সাহায্য না নিয়ে চলা অসম্ভব। সে বলতে পারবে না দৃশ্য-অদৃশ্য কোন সাহায্যের বাইরে আছে বা ছিল। চিন্তা না করা আর ইচ্ছেকৃত ভুলে যাওয়া মানুষের একটা বড় ধরনের সমস্যা বা রোগ। এর সঠিক চিকিৎসা করার আগ পর্যন্ত এই রোগীর কাছ থেকে মানুষের কল্যাণে মানবতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি, সৌহার্দ্য, আশা করা সম্ভব নয়।
অথচ এদিকে প্রায় প্রত্যেক পরিবারই কুশিক্ষার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া সরলতা, কৃষকের অর্থ উপার্জনে কাঠফাঁটা রোদে পড়ে থাকা সহজ-সরল জীবন, মানসিকতা, সকলের খোঁজখবর নেয়া, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব, গ্রাম তথা ব্যাপক পরিসরকে নিজের ঘর মনে করে খোঁজ-খবর নিয়ে পরের উপকারে এগিয়ে আসার মানসিকতা এখন শহুরে জীবনের কাছে শুধুই গল্প।
“সিগারেটের ধোঁয়ার মতো এই বিষবাষ্প একজনের দ্বারা ১০ জনে এবং ক্রমান্বয়ে পুরো পৃথিবীকে দুষিত করছে। কেউ এখন কারো থেকে কম নয়, বলতে গেলে আমি নিজেও।”
একটা সময় ছিল, মা-খালারা এমনভাবে রাস্তাঘাটে চলতো বা বাসাবাড়িতে নিজেদেরকে আবৃত করে রাখতো যে কার ঘরে কে সারাজীবন শুধু শুনে এসেছে। কখনো চোখে দেখেনি। সেখানে তো যৌন হয়রানির প্রশ্নই আসে না। এরপরের এক প্রজন্ম আটসাঁট ছোটখাটো জামাকাপড়ের প্রচলন করলেও সেগুলোতে তারা নিজেরাও ইতস্তত ছিল। কিন্তু ব্যতিক্রমের মানসিকতায় তারা তাতে সন্তুষ্ট ছিল না। তাদের পরবর্তী জামানায় তাদের সন্তানরা, ছেলেরা মেয়েদের মত এবং মেয়েরা ছেলেদের মত পোশাক-পরিচ্ছদে এমন উশৃংখল, যা তাদের পারিবারিক শান্তির বাঁধ ভেঙে দিয়েছে এবং এই পরিচ্ছদের জন্য ইউরোপের মত ঘরে ঘরে মেয়েরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে।
যদিও যৌনতা এখন তেমন কোন বিষয় নয়। তবে যে মেয়ে তার সম্ভ্রম হারিয়েছেন এবং বহু পুরুষের মানসিকতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের ভবিষ্যৎ, দিনশেষে সন্তান-সংসার-সামাজিকতায় তারা চরম নিগৃহ বা অতৃপ্তিতে ভুগেন। যেখানে গাঁয়ের একজন শালীন নারী শত কষ্টের মাঝেও জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চরম তৃপ্তি, সম্মান ও ভালোবাসা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
প্রতিটা ভূখণ্ডেরই আলাদা আলাদা সংস্কৃতি, শিক্ষা, মানসিকতা ও নিরাপত্তা বলয় থাকে। যাতে তারা তাদের সংস্কৃতিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু কোত্থেকে এখন আধুনিকতার আড়ালে অপসংস্কৃতি বা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির চর্চা শুরু হয়েছে যা আমাদের জন্য চরম বিব্রতকর। চাইলেই সেই অতীত সংস্কৃতিগুলো পরিবর্তন করা সুখকর হয়ে উঠছে না। এসব সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রাস করে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছে পাশ্চাত্যের বাবুদের চক্রান্তে।
আমাদের মেধাগুলোকে নিয়ে গিয়ে মগজ ধোলাই করে বিশৃঙ্খলতার জন্য ফেরত পাঠায় । যেখানে প্রতিবেশী দেশ চীন কোরিয়া জাপান রাশিয়া তাদের সংস্কৃতি বিচার বিশ্বাসে অনড়, উন্নত ও সমৃদ্ধ। আমাদের কাছে সুখ ও শান্তি এ দুটি শব্দের পার্থক্য অজানা। গুলিয়ে ফেলা জীবনে ক্ষণে ক্ষণে সুখ পাই কিন্তু শান্তি উধাও। তাই পরিশেষে, মানবতা পুনরুদ্ধারের আগে নিজে ঠিক হতে হবে তারপর পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী । তখন আমাদের মানবতা সহমর্মিতা সহানুভূতি সৌহার্দ্য তথা শান্তির সংস্কৃতি পুরো পৃথিবী ছড়িয়ে আমাদের অনুকরণে পৃথিবী চলবে।
সরকার জুম্মান: সাংবাদিক ও লেখক
যাত্রাবাড়ি, ঢাকা
ক্যাটাগরি: ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান, মিনি কলাম