"সমাজে দেখা গেছে যারা বেশি বা উচ্চশিক্ষিত তারাই পিতা-মাতার ঋণ ভুলে যায়। ভুলে যায় নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা। তাই তো বলা হচ্ছে, অমানুষদের তালিকায় উচ্চশিক্ষিতরাই বেশি।"
কষ্টের টাকায় তিলে তিলে বড় করে তোলা সন্তানরা আজ ভুলে যায় পিতা-মাতাকে। রেখে আসে আশ্রমে। জীবনের শেষ বেলায় মা-বাবা যখন একটু সন্তানদের সান্নিধ্য চান, তখন বড্ড ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেই সন্তানগুলো। মা-বাবারাও সন্তানদের বড় বানাতে বানাতে এতোই বড় বানিয়ে ফেলেন যে তাদের আর নাগাল পান না। উচ্চশিক্ষিত হওয়ার পরও অধিকাংশই উঁচু মনের মানুষ হতে পারছেন না। ভুলে যাচ্ছেন নিজেদের আপন কর্তব্যটুকুও।
যেমন বলা যেতে পারে অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের কথা। যিনি বাংলা সিনেমার নবাব সিরাজউদ্দৌলা খ্যাত। অভিনয় জীবনের সকল উপার্জন, ব্যয় করেছেন সন্তানদের পেছনে। বড় ছেলে সুইডেন, বাকী ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে আমেরিকায়।
অভিনয় জগতের সফল এই মানষুটি একা বাসায় ধুকে ধুকে মরলেন। অনেক উঁচুতে থাকা সন্তানগুলোর একজনও আসেননি বাবাকে দেখতে। জীবনের শেষ বেলাতেও অভিনয় করতে হয়েছে পেটের তাগিদে চাকর-বাকরের চরিত্রে।
আরেকজন ২ সন্তানের পিতা ও দেশের সাহসী কবি আল মাহমুদ। বনানীর বাড়ী বিক্রি করে সন্তানদের বিদেশে পাঠান তিনি। কিন্তু আর দেশে ফিরে আসেননি তাঁর আদরের দুলালেরা। কবি যখন নিজ বাড়িতে বিছানায় শায়িত ছিলেন তখনও তাঁর দেখার কেউ ছিল না। এরপর হুট করেই একদিন চলে যান না ফেরার দেশে।
সন্তান মেধাবী হলে বাবা মা তাঁদের পেছনে পয়সা খরচ করতে কৃপণতা করেন না। বাড়ি, গাড়ি, সোনা, গহনা সবই বিক্রি করে দেন তবুও মা-বাবার আনন্দের সীমা থাকে না। অথচ এই সন্তানগুলোই বড় হয়ে ভাল পজিশনে পৌঁছে মা-বাবাকে কষ্ট দেয়। ভীষণ কষ্ট দেয়!
আর গত ফেব্রুয়ারিতে বড্ড একাকী জীবন সহ্য করতে না পেরে ফেসবুক লাইভে এসে মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী আবু মুহসীন খান। কিন্তু তার আরেকটা পরিচয়, তিনি বাংলা সিনেমার অন্যতম সফল নায়ক রিয়াজের শ্বশুর।
আবু মহসীন খান মৃত্যুর আগে লাইভে বলেছিলেন, ‘৩০ জানুয়ারি আমার খালা মারা যান। খালার একমাত্র ছেলে আমেরিকা থাকে। মার মৃত্যুতে সে আসেনি। আজ (বুধবার) আরেক খালা মারা গেল। তার ৩ ছেলে ইঞ্জিনিয়ার, আরেক ছেলে আমেরিকায়। এক ছেলে আসতে পারেনি তবে বাকি ৩ জন দাফন কাজ করেছে।
‘আমার একমাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়া থাকে। আমি আমার বাসায় সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়ে থাকি আমার মনে হয় না এক সপ্তাহেও কেউ জানতে পারবে যে আমি মারা গেছি। আমরা সবকিছুই করি ছেলে-মেয়ে স্ত্রী-পরিবারের জন্য। গত করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কি কষ্ট, যারা একা থাকে তারাই এই কষ্ট বুঝে। আমার জীবনে আমি যাদের জন্য বেশি করেছি, তাদের দ্বারাই বেশি প্রতারিত হয়েছি।
এভাবেই সমাজে দেখা গেছে যারা বেশি বা উচ্চশিক্ষিত তারাই পিতা-মাতার ঋণ ভুলে যায়। ভুলে যায় নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্যের কথা। তাই তো বলা হচ্ছে, অমানুষদের তালিকায় উচ্চশিক্ষিতরাই বেশি।
নেট থেকে সংগৃহীত ও ঈষৎ সম্পাদিত
ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি, প্রধান খবর, শীর্ষ তিন