"সন্তানের প্রতি অসম্ভব আকর্ষণ ও ভালো লাগার বিষয়টা আমার নিজেরও জানা ছিল না। যারা কখনো সন্তানের বাবা-মা হননি, তাদের পক্ষে জ্ঞান ও চিন্তা দিয়ে অর্ধেকও বুঝা সম্ভব নয়। অন্তত একজন বৈধ সন্তান তার খুবই প্রয়োজন ছিল।"
তসলিমা দাদী ওজন কমানোর পর ক`টা ছবি দিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন সামাজিক অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এরপর আর সেই স্ট্যাটাসটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে ছবিগুলোতে প্রকৃত বয়সের ছাপ বোঝা যাওয়ায় সম্ভবত তিনি `লজ্জা` বা ট্রলের আশঙ্কায় সেটি ডিলিট বা `অনলি মি` করেছেন। অথচ আমি মনে করি বয়সের ছাপটাকে সহজে গ্রহণ ও প্রকাশ করার সৎসাহস তার থাকা উচিৎ।
এতে অনেক লাভ আছে। নিরপেক্ষভাবে জীবনে অন্তত একটা সত্যের মুখোমুখি হওয়া এই শেষ বয়সে খুবই দরকার। প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়মকে মানুষ ভয় বা লজ্জা পেতে পারে না। তাছাড়া সে ছবিগুলোতেও কিন্তু তিনি কড়া লিপস্টিক, মেকাপ ও দামী সানগ্লাস দিয়ে বয়স অনেকটা আড়াল করেই রেখেছেন। বেডরুমে লিপস্টিক, সানগ্লাস ও মেকাপহীন অবস্থায় তাকে নিশ্চয় আরো ফ্যাকাশে, বয়স্কা এবং অনাকর্ষণীয় দেখায়। অবশ্য বেডরুম প্রসঙ্গটি এখন হয়তো তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
বেডরুম প্রসঙ্গ আনায় লজ্জা বা অশ্লীলতার কিছু নেই। প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য এটা একটা ওপেন সিক্রেট বিষয়। আর আমিও তার মতোই একটু খোলামেলা আলোচনা করতে পছন্দ করি। যা হোক, তিনি তার লেখা ও স্ট্যাটাসগুলোতে অতীতের সেই ছবিগুলোই এখনো ব্যবহার করছেন। এটা অনেকের সঙ্গে তো বটেই, নিজের সঙ্গেও একটা প্রতারণা। এই বয়সেও পরপুরুষদের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনটা কি আবশ্যক? জীবনে কি অন্য কোনো প্রসঙ্গ, কাজ, চিন্তা, সময় কাটানোর উপকরণ খুব একটা নেই?
অন্তত দুটো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস অবশ্য তার নেই। নিজ দেশ ও সন্তান। সন্তানের প্রতি অসম্ভব আকর্ষণ ও ভালো লাগার বিষয়টা আমার নিজেরও জানা ছিল না। যারা কখনো সন্তানের বাবা-মা হননি, তাদের পক্ষে জ্ঞান ও চিন্তা দিয়ে অর্ধেকও বুঝা সম্ভব নয়। অন্তত একজন বৈধ সন্তান তার খুবই প্রয়োজন ছিল। তাতে অলৌকিক না হলেও, প্রাকৃতিক কিছু বিষয় থেকে তিনি বঞ্চিত হতেন না। এতে নারীরাও তার কাছ থেকে নতুন কিছু বিষয় জানতে পারতো। অন্যদিকে তিনি যে বেডরুমে `সক্ষম বা দীর্ঘস্থায়ী` পুরুষের সাক্ষাৎ পাননি, এটা খুবই দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়। আহা বেচারী, আল্লাহ, রাসূল ও ধর্মকে অস্বীকার করেও এটা না পেলে জীবনে থাকে কী?
তিনি কীসব ছেলে-পুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন সেটাও আমার বুঝে আসে না। প্রতিবার অন্তত দুঘণ্টা তো কোনো ব্যাপার না। চাইলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। চার-ছ`বছর আগে আমার ফেসবুক টাইমলাইনে আমি অবশ্য তাকে একরকম প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তখন আমি বিয়ে করিনি, তারও কিছুটা বয়স ছিল। আর যাই হোক, অন্তত বৈধ একটা সন্তান হয়তো দিতে পারতাম। ওকে নিয়ে বাকি জীবন কিছুটা সুখে-শান্তিতে হয়তোবা কাটানো যেত।
জীবনে অনেক রিস্ক নিয়েছেন, এটাও নেয়া যেত। আর ধর্মকে অস্বীকারের যে বিষয়টা, এটা তিনি অনেকটা পেশাগত কারণে এবং কিছুটা অভ্যাসগত, স্বভাবগত ও প্রতিহিংসাগত কারণে করেন। মূলত ধর্মের সত্যতার বিষয়টি তিনি নিজেও সময়ে সময়ে উপলব্ধি করেন। হুট করে একদিন স্বীকার করে নিলেই হয়, সেই সিগারেট ছেড়ে দেয়ার মতো। ভালো থাকুন।
লেখক: জাকির মাহদিন
সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সম্পাদক: দেশ দর্শন
ক্যাটাগরি: ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান, প্রধান কলাম, সম্পাদকের কলাম
নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার চেষ্টা সবাই করে তবে বুড়ো বয়সে ভীমরতি আবার সবাই দেখাইতে পারে না।