"সপরিবারে আরেকজন যাত্রী, নাম সুলতান উদ্দীন খান। যাবেন নরসিংদী। অনেক কষ্টে সাথে বউ ও এগারো বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে দুটো `সোনার হরিণ` হাতে পেয়ে সব কষ্ট ভুলে গেলেন। কিন্তু বেচারা বুঝতে পারেননি ঢাকা থেকে নরসিংদী যাবার কষ্ট তার শেষ নয়, বরং সবে শুরু।"
গত ১৯ আগস্ট, শুক্রবার। কমলাপুর রেলস্টেশন, ঢাকা। অনেক দূর থেকে শামীম মিয়া নামে একজন ২০০ টাকা রিক্সাভাড়া দিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে এসে, দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কেটেছেন। যাবেন ভৈরব, কিন্তু আখাউড়া ছাড়া কোনো টিকেট নেই। কাটলেন আখাউড়ার, বগি `ঠ`। কিন্তু বেচারার কপালে অনেক দুর্ভাগ্য। হাতে ও পিঠে বড় দুটো ব্যাগ নিয়ে, সাথে বউ-বাচ্চা নিয়ে পুরো ট্রেন দুবার চক্কর দিয়ে জানতে পারলেন, `ঠ` বগি নামে চিহ্নিত কোনো বগি আজকের তিতাসে নেই। ফলে যা হবার তাই হলো। দায় নেবার কিংবা সামান্য সহযোগিতা করার কেউ নেই।
সপরিবারে আরেকজন যাত্রী, নাম সুলতান উদ্দীন খান। যাবেন নরসিংদী। অনেক কষ্টে সাথে বউ ও এগারো বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে দুটো `সোনার হরিণ` হাতে পেয়ে সব কষ্ট ভুলে গেলেন। কিন্তু বেচারা বুঝতে পারেননি ঢাকা থেকে নরসিংদী যাবার কষ্ট তার শেষ নয়, বরং সবে শুরু। যথারীতি প্রচুর খোঁজাখুঁজির পর `ঠ` বগি খুঁজে না পেয়ে ট্রেন ছেড়ে দেবার পর তাড়াহুড়ো করে উঠলেন `চ` বগিতে। এতে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারতো।
এত চাপাচাপি, যেখানে দাঁড়ানোর জায়গা নেই সেখানে বসার জায়গা তাদের কে দেবে? যাত্রীদের সবাইকে বলছেন একটু সহযোগিতা করার জন্য। বললেন টিকেটে নির্দিষ্ট সিট তিনি পেয়েছেন ঠিকই, কিন্তু উল্লেখিত বগিটি নেই। তার কথা কেউ বিশ্বাস করে না, কারণ এমনটা হতেই পারে না। অবশেষে কয়েকজন মিলে দায়িত্বরত দুজন টিকেট চেকারকে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু তারাও কেউ ব্যাপারটি জানে না। চাপ দেবার পর জানায় তিতাস ট্রেন আজ `ঠ` বগি আখাউড়ায় ফেলে এসেছে। অথচ কাউন্টার থেকে এর টিকেট ঠিকই বিক্রি হয়েছে। এই অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতারা জানে না। আবার ট্রেনের টিকেট চেকাররাও কেউ জানে না। এটা কী করে হয়?
কমলাপুর রেলস্টেশনে ট্রেন দীর্ঘ দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও তাদেরকে ট্রেনের দায়িত্বশীল কেউ এটা জানায়নি। এতে কয়েকশত নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন। এদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না, তাদের সীটের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না। এর দায়ভার নেবে কে? তিতাস কমিউটারের দায়িত্বশীল কাউকেও এ ধরনের সমস্যা সময় পাওয়া যায় না। অন্যদিকে এর কোনো বগিতে বাথরুমে পানি নেই, লাইট নেই, দরজা ভাঙ্গা। চরম নোংরা পরিবেশ। প্রশ্ন উঠছে, বছরের পর বছর এভাবে তিতাস কমিউটার ট্রেন কিভাবে চলছে? এদিকে কারোরই নজর পড়ছে না?
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে আরো পর্যবেক্ষণ করে আরো দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া টু ঢাকার স্পেশাল এ ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন থেকে ছাড়ার নির্ধারিত সময় দুপুর দেড়টায়। নির্ধারিত কাউন্টার থেকে টিকেট দেয়া হয় সকাল ১০টা থেকে। অধিকাংশ সময় আরো পাঁচ/দশ মিনিট দেরি করে কাউন্টার খুলে। কিন্তু অসংখ্য যাত্রী সিট পাবার আশায় লাইন ধরে ফজরের পর থেকেই। এরপরও অধিকাংশ যাত্রী সিট পান না। সামান্য কিছু সিট বিক্রির পর জানানো হয় আর সিট নেই। অথচ বাইরে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তিতাসের সিট পাওয়া যাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে।
ভোগান্তির শুধু এখানেই শেষ নয়। কাউন্টার থেকে ওই সামান্য সিটগুলো আবার দুটো টিকেট কেটে দুটো সিট পাওয়া যায় না। বরং তিনটা টিকেট কাটলে দুটো সিট মিলে। এতে সবান্ধবে ও সপরিবারে যাত্রা করা বহু প্রকৃত যাত্রী দিনের পর দিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি, প্রধান খবর, শীর্ষ তিন
অথচ এই তিতাস ট্রেন কিন্তু তার ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক নিয়ে প্রায় প্রতিটা ট্রিপ দিচ্ছে এবং তাদের ভাড়া মে রে দেওয়ার মতো কোন প্যাসেন্জার এই তল্লাটে নাই। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকা ননষ্টপ একটি ট্রেন দরকার। এই রেলষ্টেশনটি উক্ত অঞ্চলের সর্বোচ্চ সংখ্যক যাত্রী চলাচলকারী স্টেশন। কোন দাবী নয় এটি অবশ্যই করা উচিত বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাসী মনে করে। পাশাপাশি এই ট্রেনের আরেকটা সমস্যা হলো দুটি টিকেটের দাম দিলে কাউন্টার থেকে একটি সিট দেয়। এটাও একপ্রকার জনভোগান্তি।