"সুখ-শান্তি উপভোগের জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করে শেষ পর্যন্ত একরাশ দুঃখ-হতাশা ব্যতীত তার প্রাপ্তির হিসাবে কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না।"
গভীর রাতে পুরো শহরটা যখন নিস্তব্ধ, আমি তখন জেগে থাকি নিশাচরের মতো। জেগে জেগে ভাবি মানুষ, জীবন ও তার বাস্তবতা নিয়ে। কী তার জীবনের লক্ষ্য? কেন সে ছুটে চলে অবিরত? কেনইবা নিজেকে বাঁধে এক মায়ার বাঁধনে? শুধুই নিজেকে একটু প্রকাশের জন্য এতসব আয়োজন করে মানুষ! নাকি নিজের মাঝে না বলা কষ্টগুলো আড়াল করে, এক অভিনেতা হিসেবে শুধু জীবনের মঞ্চে অভিনয় করে চলছে।
সুখ-শান্তি উপভোগের জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করে শেষ পর্যন্ত একরাশ দুঃখ-হতাশা ব্যতীত তার প্রাপ্তির হিসাবে কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষ নিঃশ্বাসটা অতি ভারী হয়ে যায় আক্ষেপের কলজে-পোড়া গন্ধে। জীবনকে দুঃখের ভাণ্ডার করে কেন সে ছুটে চলে এক `কাল্পনিক সুখের` পেছনে?
দুই. কত আপনই না ভাবি মানুষকে। কিন্তু তারা কী আমায় একটি বারের জন্যও নিজের প্রকৃত আপজন ভেবেছে? যদি ভেবে থাকত তবে প্রতিনিয়ত তারা আমার সঙ্গে ছলনা করত না। অতীতেও মানুষকে ঘিরে অনেক স্বপ্ন দেখতাম। বর্তমানেও দেখি। তবে ভবিষ্যতে মনে হয় এ স্বপ্নগুলো আর দেখা হবে না। কারণ দিনদিন মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রতারণার পরিমাণটা বেড়েই চলেছে। হয়তো একদিন মানুষের প্রতি সব বিশ্বাসই হারিয়ে যাবে। তবুও মানুষকে বিশ্বাস করা ছাড়া চলা যায় না। তাই হয়তো প্রয়োজনে মানুষকে বিশ্বাস করা হবে। আর প্রয়োজন শেষ হলে তার প্রতি বিশ্বাসটাও হারিয়ে যাবে।
যতদিন নিজের সিদ্ধান্তগুলো নিজে নিতে না পারতাম, ততদিন কারো না কারো ছায়া আশা করতাম, নিজেকে ভালো রাখার জন্য। এখনও খারাপকিছু মাথায় আসলে ভালোদের কাছে নিজেকে সপে দেই। আমার ব্যক্তিগত অভিমত, যতদিন নিজেকে ভাল রাখার উপায়গুলো আয়ত্ব না হয়, ততদিন কারো না কারো সঙ্গে সঙ্গে থাকাটাই শ্রেয়। যে আমার বা আপনার শান্তি কামনা করে।
তিন. আমরা কী কখনো নিজের বিশ্বাস আর নিজের মধ্যে লালিত ধর্মকে প্রশ্ন করে দেখেছি? আমরা যা মানছি বা বলছি তা আসলে কী শুধুই আমার মুখের বুলি? নাকি অন্তরে বেঁজে উঠা আবেগের সুর? যদি আবেগের সুর হয়ে থাকে তবে হয়তো তা নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে। কারণ আবেগে কল্পনার আশ্রয় নিয়ে থাকে মানুষ। অপরদিকে মুখের বুলি হলে, অন্তরের ভাবনার সাথে মিল না থাকলে তা নিজেকে যেমন যন্ত্রণা দিয়ে থাকে তেমনি অপরের ক্ষতি সাধনও করে থাকে।
তাই আবেগের সাথে নিজের বাস্তব অর্থাৎ কথার বুলির মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলা অতীব জরুরী। যার মুখ বলে একটা আর অন্তর বলে আরেকটা- তার ভেতরে প্রতারণা নামক ধ্বংসাত্মক এক ব্যাধী ধীরে ধীরে তাকে মহাকালের কাছে মহাপাপীরূপে দাঁড় করায়। যেখান থেকে বের হওয়ার জন্য তীব্র অনুশোচনা ব্যতীত দ্বিতীয় বা বিকল্প কোনো পথ থাকে না।
শরীফ উদ্দীন রনি : শিক্ষক, কলামিস্ট
sharifuddin420953@gmail.com
ক্যাটাগরি: ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান, প্রধান কলাম