কিন্তু এ বিরামহীন ছুটে চলার প্রান্তসীমা যখন চোখের পলকে মানুষের সামনে এসে হাজির হয়, তখন জীবনের হিসাব মিলাতে গিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নিজেকে ব্যর্থ ও পরাজিতের কাতার ব্যতীত অন্য কোথাও নিজেকে স্থান দিতে পারে না। তার কারণগুলো হয়তো মানুষ চিহ্নিত করতে চায় না বা করতে পারে না। সময়ের সাথে নিজেকে খাপ না খাওয়াতে পারায় সবর্দা দুশ্চিন্তায় অতিবাহিত করতে হয় নিরাপত্তাহীনতায়।
এ কারণে নিজেদের ব্যর্থ হবার সম্ভাব্য কিংবা অত্যাবশকীয় কারণগুলো অনুসন্ধান করে না মানুষ। শুধু ছুটে চলেছে `সমগ্র জীবনের` চিন্তা বাদ দিয়ে তার একটি ক্ষুদ্র অংশ কথিত চাকরি অর্থাৎ ক্যারিয়ারের পেছনে। ক্যারিয়ার বলতে আসলে আমরা কী বুঝি? খুব অল্প সংখ্যক মানুষ বোধহয় এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। কারণ আধুনিক শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত সমাজে সবার কাছে ক্যারিয়ার মানেই ভাল চাকরি।
অথচ জীবনের মৌলিক চাহিদা পূরণের সম্পূরক অর্থ উপার্জনের একটি উপায় বা মাধ্যম হল এ চাকরি। এছাড়াও বহু মাধ্যম রয়েছে যার মাধ্যমে মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতে পারে। এ মাধ্যমগুলোই কি আসলে ক্যারিয়ার বলতে আমরা যা বুঝি তা? না শুধু সম্পূর্ণ জীবনের আংশিক একটি অধ্যায়মাত্র। ক্যারিয়ার অন্য সকল শব্দের মতো অপব্যবহৃত হচ্ছে না তো? সবার মাঝেই ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা কাজ করে। তবে তা পূর্ণতা পায় না। কারণ আমরা ক্যারিয়ারকে ব্যবহারিকভাবে ব্যবহার করি শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ভাল কোনো সরকারি-বেসরকারি চাকরী অথবা ব্যবসায়িক সফলতার ভিত্তির উপর নির্ভর করে। অথচ এটা আসলে ক্যারিয়ার ভাবনা নয়। এটি হলো জীবন পরিচালনার প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের একটি মাধ্যমের ভাবনামাত্র।
আসলে ক্যারিয়ার হলো সমগ্র জীবনের সামগ্রিক কাজের সমষ্টি। জন্মের শুরু থেকে মৃত্যুর পূর্বমূর্হুত পর্যন্ত সকল কাজই ক্যারিয়ারের অন্তর্ভূক্ত। প্রাথমিক ক্যারিয়ার ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন পরিবার। পরবর্তীতে তা সম্পূর্ণ ব্যক্তির উপর চলে আসে। ব্যক্তিভাবনাই তার ক্যারিয়ার গঠনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ক্যারিয়ারের শুরুটা যে মানব শিশুর জন্মের পর ধীরে পরিপক্কতা লাভ করে, তার ক্যারিয়ার গঠনের প্রাথমিক সময়গুলো কাটে বাস্তবতার কথিত সত্যের মাঝে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ যেভাবে ভাবছে সেভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গঠনে উদ্বুদ্ধ হতে থাকে। সে দিন দিন ভুলে যেতে থাকে তার ক্যারিয়ার হলো তার বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যতের সকল কাজের সমষ্টি।
সে যা দেখছে বা ভাবছে তা হলো জীবিকা নির্বাহের একটি ক্ষুদ্র ক্যারিয়ার। সম্পূর্ণ বইটাকে রেখে শুধু একটি অধ্যায়ের পেছনে ছুটে চলতে শুরু করা। ক্যারিয়ার ভাবনার প্রাথমিক পর্যায়টা হওয়া উচিত সামগ্রিক জীবনের ভাবনার আলোকে। যার যত বেশি সামগ্রিক ভাবনার প্রতি আকর্ষণ থাকবে, তার ক্যারিয়ার তত বেশি বিস্তৃতি লাভ ও প্রভাব ফেলবে মানুষের জীবনে।
শরীফ উদ্দীন রনি : শিক্ষক, কলামিস্ট
sharifuddin420953@gmail.com
ক্যাটাগরি: মিনি কলাম, সম্পাদকীয়