এ ধরনের অঙ্গীকারপত্র দেওয়ার পর ভুক্তভোগী দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ইকবাল হোসেন বেলাল সারাক্ষণ আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। এ ব্যাপারে কারো সাথে ভয়ে কিছু বলতে চান না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া উপজেলাস্থ রাধানগর মহল্লায় বসতভূমি নিয়ে বিরোধের জেরে এক প্রবাসীর বাড়ির সীমানা প্রাচীর ও টিনের বেড়া ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। অবাক হওয়ার বিষয়, এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে বরং অভিযোগকারীকে থানায় ধরে নিয়ে যায় এবং তার কাছ এই মর্মে লিখিত অঙ্গীকারপত্র নেয় আখাউড়া থানা কর্তৃপক্ষ যে, “এ বিরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে বা সাংবাদিকের কাছে কোনো ধরনের অভিযোগ করা যাবে না।” এ ঘটনাটি আখাউড়াসহ সারাদেশে এখন বেশ আলোচিত বিষয়।
এ ধরনের অঙ্গীকারপত্র দেওয়ার পর ভুক্তভোগী দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ইকবাল হোসেন বেলাল সারাক্ষণ আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় আছেন। এ ব্যাপারে কারো সাথে ভয়ে কিছু বলতে চান না।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আখাউড়া শহরের রাধানগর এলাকার মৃত আবু ছায়েদের ছেলে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবাসী ইকবাল হোসেন বেলালের সঙ্গে জায়গা নিয়ে প্রতিবেশী মৃত রাখাল চন্দ্র বণিকের ছেলে শিপন চন্দ্র বণিকের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। এর জেরে গত ২ মে ভোরে শিপন বণিক ও তার সহযোগীরা বেলালের বাড়ির পাকা সীমানা প্রাচীর ও টিনের বেড়া ভেঙে জায়গা দখলে নেয়ার চেষ্টা করে।
এমতাবস্থায় জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে ঘটনা জানানো হলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে শিপন বণিকসহ ৫ জনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ধৃতদের শনাক্ত করার কথা বলে প্রবাসী বেলালকে থানায় ডাকা হয়। পরে বেলালসহ ৩ জন থানায় গেলে তাদেরকেও আটক করে আদালতে চালান করে দেয়ার ভয় দেখান থানার এস আই আবু ছালেক। পরবর্তীতে জায়গা নিয়ে চলমান বিরোধ স্থানীয়ভাবে সালিশ বৈঠক করে মীমাংসা করা হবে এবং সালিশের আগ পর্যন্ত আর কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত না হওয়ার ও ভাঙচুরের ঘটনা থানা, আদালত, মিডিয়া অথবা কোনো সংস্থার কাছে অভিযোগ না করার শর্তে অঙ্গীকারপত্র নিয়ে উভয় পক্ষকে ছেড়ে দেয়া হয়।
অঙ্গীকারপত্র বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ইকবাল হোসেন বেলাল বলেন, শিপন বণিক ও তার সহযোগীরা জোর করে আমার পৈত্রিক বসত বাড়ির জায়গা দখলে নিতে চায়। ওই দিন (২মে) ভোরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিপন বণিক দলবলসহ আমার বাড়িতে এসে হামলা করে। আমার বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে বাড়ির উঠানে ঘর তৈরির চেষ্টা করে। থানায় এ ব্যাপারে জানানোর পরও শিপন বণিক ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। থানার আশকারা ও প্রশ্রয় পেয়ে অভিযুক্ত শিপন বণিক অনবরত আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমি সাদামাটা লোক। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। আমি যে কোনো সময় হত্যার শিকার হতে পারি। আমি রাষ্ট্রের কাছে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা চাই। আমি অভিযুক্ত শিপন বণিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
ইকবাল হোসেন বেলাল আরো বলেন, আমারা ছিলাম পাঁচ ভাই। এর মধ্যে তিন জনই মারা গিয়েছেন। তাদের পরিবার আমার আয়ের উপর সম্পূর্ণ নির্ভশীল। জমি সংক্রান্ত এই বিরোধের জন্য আমি আজ দেড় বছর যাবত দক্ষিণ আফ্রিকায় আমার কর্মস্থলে যেতে পারছি না। তাই আমার পরিবার ও আমার ভাইদের পরিবার নিয়ে অর্থকষ্টের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি। আমি শিপন বণিকের এই বর্বর ঘটনার সঠিক বিচার চাই।
ইকবাল হোসেন বেলাল আরো বলেন, শিপন বণিক তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া পুরো ভূমির অংশ ২০১০ সালে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু জায়গার পুরো অংশ বিক্রি করার পরও শিপন বণিক ক্রেতা সাইফুলকে ভূমির দখল বুঝিয়ে দিচ্ছেন না! এতে প্রমাণিত হয়, ওই ভূমিতে শিপন বণিকের কোনো মালিকানা স্বত্ত্ব নেই। তাই আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে লাঠিয়াল শিপন বণিকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
খায়রুল আকরাম খান: ব্যুরো চীফ
ক্যাটাগরি: অপরাধ-দুর্নীতি, প্রধান খবর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, শীর্ষ তিন